Monday, May 30, 2016

৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ইংরেজির প্রস্তুতিকৌশল

দুই ধরণের কাজে কখনও ক্লান্তি আসে না : এক। যে কাজটি করতে আপনি ভালবাসেন। দুই। যে কাজটি না করলে আপনার অস্তিত্বই অর্থহীন হয়ে পড়বে।
চাকরির জন্য পড়াশোনা করাটাকে যদি আমি দ্বিতীয় ধরণের কাজের মধ্যে ফেলে দিই, তবে বলব, বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য এখনও হাতে যে সময়টা আছে, সে সময়ে যদি আপনি দৈনিক গড়ে ১৫ ঘণ্টা ঠিকমতো ফাঁকি না দিয়ে পড়েন, তবে আপনি প্রিলি পাস করবেনই। আপনার প্রস্তুতি শূন্যের কোঠায়, এটা ধরে নিয়ে আমি আপনার জন্য প্রথম আলো’তে লিখছি।
এ সময়টাতে নিজের উপর সর্বোচ্চ যতটুকু প্রেশার দেয়া যায়, ততটুকু প্রেশার দিয়ে পড়াশোনা করুন। শত শত ইংরেজির প্রশ্ন সলভ করুন যেগুলি বিভিন্ন চাকরি কিংবা ভার্সিটির নানান ভর্তি পরীক্ষায় এসেছে। প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর ইন্টারনেটের বিভিন্ন গ্রামার ফোরাম, ডিকশনারি, গ্রামার এবং ইউসেজের বই, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানের গ্রামার বই দেখে শিওর হয়ে সলভ করুন। গাইডের উত্তরকে সবসময়ই বিশ্বাস করবেন না। কারণ, গাইডলেখকদের জানার দৌড় খুব বেশি নয়। একটা প্রশ্নকে চারটা প্রশ্নের সূতিকাগার বানান। যেটা উত্তর, সেটা ছাড়াও বাকি তিনটা অপশন নিয়েও পড়াশোনা করে ফেলুন।
নিচের কোন বাক্যটি ভুল?
All the faith he had had had had no effect on the outcome of his life.
One morning I shot an elephant in my pajamas. How he got into my pajamas I’ll never know.
The complex houses married and single soldiers and their families.
The man the professor the student has studies Rome.
The rat the cat the dog chased killed ate the malt.
দেখলে মনে হয় না, সবক’টাই ভুল? মজার ব্যাপার হল, কোনটিই ভুল নয়। এটা বুঝতে গ্রামারের সাথে কমনসেন্সও লাগে। আর কমনসেন্স ভাল করার জন্য অনেক অনেক বেশি প্র্যাকটিসের কোন বিকল্প নেই।
বিসিএস প্রিলির ইংরেজির জন্য কিছু পরামর্শ দিচ্ছি :
1. ফেসবুকে একটু বড় বড় স্ট্যাটাস, কমেন্ট লিখুন আর চ্যাটিং করুন সহজ ইংরেজিতে। প্রতিদিন দুএকটি ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকীয়কে অনুবাদ করুন। কাজটি করাটা কষ্টকর, কিন্তু এটি ট্রান্সলেশন আর ভোকাবুলারিতে খুবই কাজে দেবে। সাথে বিভিন্ন ইস্যুর উপর আর্টিকেল আর সম্পাদকের নিকট পত্র অর্থ বুঝে এবং কাগজে লিখে লিখে সময় নিয়ে পড়ুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ/ ইএমবিএ ভর্তি পরীক্ষার আগের বছরের প্রশ্নগুলি থেকে সিনোনিম-অ্যান্টোনিম পার্টটা সলভ করলে কাজে আসবে।
2. কয়েকটি গাইড বই এবং জব সল্যুশন থেকে ল্যাঙ্গুয়েজ পার্টের গ্রামার এবং ইউসেজের প্রচুর প্র্যাকটিস করুন লিখে লিখে।
3. লিটারেচার পার্টে দুএকটি প্রশ্ন আসে, যেগুলির উত্তর যাঁরা ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স, তাঁরাও পারবেন না। নেগেটিভ মার্কিং হয় এমন কম্পিটিটিভ পরীক্ষার নিয়মই হল, সবক’টার উত্তর করা যাবে না। আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন+ জব সল্যুশন+ গাইড বই আর সাথে ইন্টারনেটে ইংলিশ লিটারেচার বেসিকস্ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে কাজে আসবে। বিভিন্ন কমন লিটারেরি টার্মস্ সম্পর্কে পড়াশোনা করে নিন।
4. গ্রামারের প্রশ্নগুলি পড়ার সময় যেসব প্রশ্নের উত্তরে কনফিউশন থাকবে, সেসব প্রশ্নের উত্তরের কনফিউশন দূর করার দায়িত্বটা ডিকশনারিকে দিয়ে দিন। যেমন, Die শব্দটির পর বিভিন্ন Preposition বসে। আপনি ডিকশনারির Die এন্ট্রিটাতে গিয়ে যে উদাহরণগুলি দেয়া আছে, সেগুলি দেখে কোন ক্ষেত্রে কোনটি বসে, এটি লিখে লিখে শিখলে ভুলে যাওয়ার কথা না।
5. Analogyতে যে Word Pair দেয়া থাকে, সে দুটি দিয়ে একটা সহজ বাংলা বাক্য গঠন করুন। অপশনগুলির মধ্যে যে জোড়া সে বাক্যটির সাথে পুরোপুরি মিলে যায়, সেটিই উত্তর।
6. ইংরেজির ক্ষেত্রে আগে গ্রামার শিখে প্র্যাকটিস করতে যাবেন না, প্র্যাকটিস করতে করতেই গ্রামার শিখুন।
7. গ্রামার আর ল্যাংগুয়েজ সেন্স ডেভেলাপ করতে সহজ কিছু ইংরেজি বইও পড়তে পারেন। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে হ্যারি পটার সিরিজের বইগুলির ১৫ পৃষ্ঠা করে পড়ে দেখেবন নাকি কী হয়!
8. ৫টি করে নতুন শব্দ শিখে প্রতিটি দিয়ে ৩টা করে বাক্য লিখুন। প্রতিদিন কী কী করলেন, দিনের শেষে সহজ ইংরেজিতে অন্তত ৩ পৃষ্ঠা লিখে ফেলুন।
ইংরেজিতে ভাল করতে হলে একজন নারি’র প্রেমে আপনাকে পড়তেই হবে; সে নারি ডিকশনারি। ইংলিশ ফর দ্য কম্পিটিটিভ এক্জামস্, অ্যা প্যাসেজ টু দ্য ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ, অক্সফোর্ড অ্যাডভান্সড লার্নারস ডিকশনারি, লংম্যান ডিকশনারি অব কনটেম্পোরারি ইংলিশ, সোয়ানের প্রাক্টিক্যাল ইংলিশ ইউসেজ, ব্যারনস্ গ্রামার, অ্যালানের লিভিং ইংলিশ স্ট্রাকচার, মারফির ইংলিশ গ্রামার ইন ইউজ, ইস্টউডের অক্সফোর্ড প্র্যাকটিস গ্রামার, ফিটিকাইডসের কমন মিস্টেকস ইন ইংলিশ সহ আরো কিছু প্রামাণ্য বই হাতের কাছে রাখবেন। এসব বইয়ের পেছনের ইনডেক্স দেখে কষ্ট করে উল্টে উল্টে উত্তর খোঁজার অভ্যেস করুন, অনেক কাজে আসবে। ইংরেজি শিখতে হয় লিখে লিখে। বিসিএস পরীক্ষায় ভাল করতে ইংরেজিতে খুব ভাল হওয়ার দরকার নেই, তবে ভয় না পেয়ে বেশি পরিশ্রম করে ইংরেজি শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। ভোকাবুলারির জন্য ম্যাক ক্যারথি এবং ও’ডেলের ইংলিশ ভোকাবুলারি ইন ইউজ (সবগুলো খণ্ড), নর্ম্যান লুইসের ওয়ার্ড পাওয়ার মেইড ইজি সহ দুএকটি দেশীয় বইও দেখতে পারেন।

৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতিকৌশল : বাংলা, ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আর নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন

আজকে কথা বলব বাংলা, ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আর নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন নিয়ে।
বিসিএস প্রিলির বাংলার প্রশ্নগুলি দেখলে মনে হবে, পরীক্ষায় যা যা এসেছে, সেগুলি ছাড়া বাংলার আর সবকিছুই আপনি পারেন। বাংলায় ‘চেনা চেনা লাগে, তবু অচেনা’ টাইপের প্রশ্ন বেশি আসে।
৯ম-১০ম, ১১শ-১২শ শ্রেণীর বাংলা ১ম পত্র বইয়ের লেখক পরিচিতি অংশটি দেখে নিন। লাল-নীল দীপাবলি, জিজ্ঞাসা, মাহবুবুল আলমের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, আগের বিসিএস রিটেনের বাংলা সাহিত্যের প্রশ্নাবলী ভালভাবে পড়ে নিন। এ বইগুলি পড়ার আগে গাইড বই আর জব সল্যুশন থেকে পুরোনো প্রশ্নগুলি যত বেশি সম্ভব, দাগিয়ে দাগিয়ে পড়ে ফেলুন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন, কোন ধরণের প্রশ্ন পরীক্ষায় বেশি আসে। মুখস্থ নয়, বারবার পড়ুন, এতে মনে থাকবে বেশি। সাহিত্যের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না, এটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিন। বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, হায়াৎ মামুদের ‘ভাষা শিক্ষা’ থেকে সিলেবাসের টপিক ধরে ধরে অধ্যায়গুলি পড়ে নিন। ব্যাকরণের একেবারে কঠিন কাটখোট্টা প্রশ্নগুলি কষ্ট করে মনে রাখার দরকার নেই। সবকিছু পারার পরীক্ষা বিসিএস নয়। কঠিন প্রশ্নে কোন বাড়তি মার্কস থাকে না, তাই ১টা কঠিন প্রশ্ন শেখার জন্য অনেকবেশি সময় না দিয়ে ওই একই সময়ে ১০টা সহজ প্রশ্ন শিখুন।
ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অংশের জন্য ৯ম-১০ম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বইটার সংশ্লিষ্ট অধ্যায়গুলি খুব ভালভাবে পড়ে ফেলুন, সাথে বাজারের ৩-৪টা গাইড বই।
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন অংশটির জন্য সবচাইতে বেশি দরকার কমনসেন্স। ৩-৪টা গাইড বইয়ের পাশাপাশি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘নাগরিকদের জানা ভালো’ বইটিও দেখতে পারেন। এ অংশের সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া মানেই কিছু নেগেটিভ মার্কসকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসা।
কিছু সাধারণ টিপস দিয়ে আজকের লেখাটি শেষ করছি।
  1. আগামী ৪০ দিনকে ৬টা বিষয় পড়ার জন্য কীভাবে সাজানো যায়, ৪ ঘণ্টা সময় নিয়ে সে পরিকল্পনা করে ফেলুন। প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন শেষ করুন। আগের দিনের কাজ বাকি থাকলে সেদিনের কাজ না কমিয়ে ঘুমানোর সময় কমিয়ে কাজ করার সময়টা বাড়িয়ে দিন।
  2. পড়তে বসার আগে কাগজে লিখে ফেলুন, সেদিন কী কী পড়বেন, কতটুকু পড়বেন। অলওয়েজ থিঙ্ক অন পেপার!
  3. বাসার বাইরে সময় না দিয়ে গড়ে ১৫ ঘণ্টা বাসায় পড়াশোনা করুন। গাইডবই কিনে প্রতিদিন ২-৩টা মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেই নিজেকে যাচাই করুন।
  4. এই সময়টাতে যারা বেশি পারে, ওদের সাথে কম মিশুন। যারা কোনো একটা বিষয়ে অনেকবেশি ভাল, তাদের সাথে কখনওই কম্পিটিশনে যাবেন না। প্রতিদিনই শুধু নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
  5. ভাল প্রস্তুতি নেয়ার চাইতে ভাল পরীক্ষা দেয়াটা বেশি দরকার। ভাল প্রস্তুতি নিলেই যেমন সবাই প্রিলি পাস করতে পারে না, ঠিক তেমনি খারাপ প্রস্তুতি নিলেই সবাই প্রিলি ফেল করতে পারে না। সবসময়ই রেজাল্ট হয় রেজাল্টের পর।
  6. ‘প্রথমবারের বিসিএস’ বলে কোনকিছু মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেবেন না। নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করুন।
  7. অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট বের হওয়ার পর আপনি অনেক অতিপণ্ডিতকে ফেল করতে দেখবেন। কে কী পারে, সেটা নিয়ে না ভেবে আপনি কী পারেন সেটা নিয়ে ভাবুন।
  8. পড়তে পড়তে ক্লান্তি এলে সহজ কোনো পড়া, যেটা আপনি সবচাইতে ভাল পারেন, সেটি খুব দ্রুত পড়ুন; ক্লান্তি চলে যাবে।
  9. চ্যাটিং, ডেটিং, ফেসবুকিং----এসবের সময় বাঁচিয়ে প্রার্থনা করুন! আগে চাকরি, পরে ওসব।
  10. পড়তে ইচ্ছে করছে না আর? চোখদুটো বন্ধ করে রাখুন ৫ মিনিটের জন্য। কল্পনায় আনুন, চাকরিটা পেয়ে গেলে আপনি আপনার কাছের মানুষগুলিকে নিয়ে কীভাবে বদলে যাবেন! বাজি ধরে বলতে পারি, পড়ায় গতি এসে যাবে আবারও!
আজ আর নয়। আবারও কথা হবে।

৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতিকৌশল : বাংলাদেশ বিষয়াবলী + আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী

আমি যখন বিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, তখন সবচাইতে কম পারতাম (প্রায় পারতাম না বললেই চলে) সাধারণ জ্ঞান। জানুয়ারির ৫ তারিখ পরীক্ষা ধরে নিয়ে প্রিলির জন্য হাতে মাত্র ১ মাস থাকলে আমি যা যা করতাম বলে আপাত ভাবনায় মনে হয়, তা তা লিখছি :
1. পুরো পেপার না পড়ে শুধু দরকারি হেডলাইনগুলিই পড়ে নিতাম। এ সময়ে কলাম আর আর্টিকেল পড়ার অতো সময় নেই।
2. বিভিন্ন গাইড থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩-৪ সেট মডেল টেস্ট দিতাম।
3. জব সল্যুশন এবং প্রিলির ডাইজেস্ট থেকে বারবার আলোচনাসহ প্রশ্নোত্তরগুলি দেখতাম।
4. কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, কারেন্ট নিউজসহ এই ধরণের বিভিন্ন বইয়ের প্রিলির জন্য স্পেশাল সংখ্যাগুলি কিনে পড়ে ফেলতাম।
5. আমার যে বন্ধুরা সাধারণ জ্ঞানে আমার চাইতে ভাল, তাদের সাথে এটা নিয়ে কথা বলা অবশ্যই বন্ধ করে দিতাম।
6. কী কী পারি না, সেটা নিয়ে মাথাখারাপ না করে, অন্যান্য বিষয়গুলি ভাল করে দেখে নিতাম। বিসিএস পরীক্ষা সাধারণ জ্ঞানে পাণ্ডিত্যের খেলা নয়।
7. প্রতিদিন গড়ে ১৫ ঘণ্টা করে পড়াশোনা করলে ৩০ দিনের মধ্যে সাধারণ জ্ঞানের জন্য সময় দেয়া যায় খুব বেশি হলে ৭০ ঘণ্টা। আর এত কম সময়ে রেফারেন্স বই না পড়াটাই বেটার।
8. পড়ার সময় শুধু এটা মাথায় থাকত : যা পড়ছি, তা পরীক্ষার জন্য লাগবে কী লাগবে না। নিশ্চয়ই এখন জ্ঞানার্জনের সময় নয়।
9. যত বেশি বাদ দিয়ে পড়া যায়, ততই ভাল। এতে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি একাধিক পড়া যাবে।
10. ধীরে ধীরে পড়ে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিয়ে পড়ার চাইতে খুব দ্রুত বেশিরভাগ পড়ে নেয়াটা ভাল। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
11. ৪টা রেফারেন্স বই পড়ার চাইতে ৩টা গাইড বইয়ের প্রশ্নোত্তরগুলি পড়ে ফেলাটা অনেকবেশি কাজের।
12. এখন বিসিএস প্রিলির সিলেবাস ধরে সাধারণ জ্ঞান পড়ার সময় নেই। যত বেশি সংখ্যক, তত বেশি প্রশ্নোত্তর প্রশ্নব্যাংক, গাইডবই, ডাইজেস্ট থেকে পড়ে নিতাম।
13. বারবার পড়লেও মনে থাকে না, এরকম অনেক কঠিন কঠিন প্রশ্ন আছে। সেগুলি মনে রাখার চেষ্টা না করে ওই একইসময়ে ৫টা কঠিন প্রশ্নের বদলে ২০টা সহজ প্রশ্ন মাথায় রাখার চেষ্টা করতাম। অহেতুক এবং অনর্থক জেদ পরীক্ষার প্রস্তুতি নষ্ট করে।
14. সাল, তারিখ, সংখ্যা, চুক্তি, নানান তত্ত্ব, সংস্থা, বৈঠক এসব বারবার পড়ে মনে রাখার চেষ্টা করতাম।
15. সাধারণ জ্ঞানের অনেক আগের পরীক্ষার কিছু প্রশ্ন সময়ের সাথে সাথে প্রাঙ্গিকতা হারিয়েছে। সেগুলি বাদ দিতাম।
16. গুগলে ইংরেজিতে কিংবা অভ্রতে বাংলায় টাইপ করে করে অনেক প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। এতে অনেক সময় বাঁচে।
17. সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনা, চুক্তি, বিভিন্ন পুরস্কার, নানান আন্তর্জাতিক এনটিটির নাম, সদরদপ্তর, বিভিন্ন স্থানের নাম, আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও চুক্তি ইত্যাদি সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নিতে বিভিন্ন পেপারের আন্তর্জাতিক পাতাটিতে নিয়মিত চোখ বুলাতাম।
18. ম্যাপ মুখস্থ করা, ছড়া-গান-কবিতা-গল্প দিয়ে নানান ফালতু তথ্য মনে রাখা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজধানী আর মুদ্রার নাম মুখস্থ করা, জোর করে হলেও সংবিধান কণ্ঠস্থ করা, অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে রাজ্যের সংখ্যাযুক্ত জিনিসপত্র মাথায় বোঝাই করাসহ বোকা বোকা আত্মতৃপ্তিদায়ক পড়াশোনা করার সময় এখন নয়। “ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য!”
19. চমকে যাওয়ার প্রশ্নে চমকে যাওয়ার অভ্যেস থেকে সরে আসতাম। সবাই যা পড়ছে, আমাকেও তা পড়তে হবে---এই ধারণা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষতিকর।
20. বাইরে ঘুরে ঘুরে ঘোরাঘুরি ভাল হয়, কিন্তু পড়াশোনা কম হয়। এই ৩০ দিনে বাসায় নিজের মতো করে না পড়ে যত ঘণ্টা বাইরে ঘোরা হবে, নিজের কফিনে ততটা পেরেক মারা হয়ে যাবে। এটা খুব ভালভাবে বুঝতে পারবেন রেজাল্ট বের হওয়ার পর!
আমি বিশ্বাস করি, খেলার রেজাল্ট হয় সবসময়ই খেলাশেষে; খেলার আগেও নয়, মাঝেও নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত রেজাল্ট বের না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কারোর চাইতেই কোনো অংশে কম নই। প্রস্তুতি ভাল হলেই যেমন পাস করা যায় না, তেমনি প্রস্তুতি খারাপ হলেই ফেল করা যায় না। ভাল প্রস্তুতি নেয়া অপেক্ষা ভাল পরীক্ষা দেয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই কয়দিনে আপনি পড়াশোনা করার সময়ে আপনার সর্বোচ্চ পরিশ্রমটা দিয়ে বুঝেশুনে প্রস্তুতি নিলে আপনি প্রিলিতে অবশ্যই পাস করে যাবেন। আগে কী পড়েননি, সেটা নয়; বরং এই ১ মাসে কী পড়বেন, সেটাই আপনার প্রিলিতে পাস কিংবা ফেল নির্ধারণ করে দেবে। সামনের ১ মাসের ইবাদতে আপনার জীবনের হিসেব লেখা হয়ে যাবে! গুড লাক!


৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতিকৌশল : সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি + গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা

‘ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স’ দিয়ে, অর্থাৎ সিভিল সার্ভিসে জয়েন করার প্রচণ্ড ইচ্ছে আর আবেগের সাথে একটু বুদ্ধিশুদ্ধি যোগ করে সামনের কয়টা দিনকে খুবই ভালভাবে কাজে লাগান। পাবলিক লাইব্রেরির সামনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকলেন, খুশি হয়ে গেলেন অনেককিছু পড়ে ফেললেন ভেবে, কিন্তু যা যা দরকার তা তা পড়লেন না, এর চাইতে বাসায় ১২ ঘণ্টা ঠিকভাবে পড়ে বাকি সময়টা বিশ্রাম নেয়াও অনেক ভালো। আমি মনে করি, সাকসেস ইজ অ্যা সেলফিশ গেম! ‘টুগেদার উই বিল্ড আওয়ার ড্রিমস’ এটা জীবনের সব ক্ষেত্রে খাটে না।
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে :
মাথায় রাখুন, আপনার বিজ্ঞানের বেসিক আপনাকে তেমন কোন বাড়তি সুবিধা দেবে না।
যত বেশি সংখ্যক প্রশ্ন পড়বেন, ততই লাভ।
অন্তত ৩টা গাইড বইয়ের/ ডাইজেস্টের সব প্রশ্ন পড়ে ফেলুন।
এ সময়ে রেফারেন্স বই না পড়লেই বরং ভাল।
বুঝে পড়ার কিছু নেই, বারবার পড়ুন। একটা বিষয় একবার বেশি রিভিশন দেয়া মানেই অন্তত ৫ মার্কস বাড়ানো।
পেপারের কম্পিউটার ও প্রযুক্তি অংশটাতে নিয়মিত চোখ রাখুন।
ম্যাথস্ নিয়ে :
প্র্যাকটিস করার সময় কোন বাড়তি কাগজে নয়, গাইডে প্রশ্নের পাশের ছোট জায়গাটিতে সলভ করুন।
কিছু প্রশ্ন, অংকটি করে নয়, বরং যে ৪টা অপশন দেয়া থাকে, সেগুলি থেকে ২টি বাদ দিয়ে বাকি ২টা থেকে ভাবলে অনেক কম সময়ে সলভ করতে পারবেন।
শর্টকাট ফর্মুলা মনে রাখতে বেশি বেশি সমজাতীয় ম্যাথস প্র্যাকটিস করুন।
ম্যাথস প্র্যাকটিস করবেন একটানা। ‘কাগজকলমে নয়, মাথায়’---এই নীতিটি যত বেশি মানবেন, ততই লাভ!
আপনি প্রিলিতে কোন অংশে কত সময় দেবেন, এটা আগে থেকে ঠিক করে নেবেন। মডেল টেস্ট দেয়ার সময় হাতের ঘড়ি দেখে মিলিয়ে নিন, আপনি কত সময়ের মধ্যে সব ম্যাথস সলভ করতে পারেন। সময়টি ধীরে ধীরে কমান।
কোন টেক্সট বই নয়, বরং অন্তত ২টা ভাল গাইড বইয়ের সব ম্যাথস শর্টকাটে সলভ করে ফেলুন।
মানসিক দক্ষতা নিয়ে :
দুএকটির কনফিউজিং প্রশ্নের উত্তর ছেড়ে দিয়ে আসবেন।
প্রস্তুতি নয়, মাথা ঠাণ্ডা রাখা আর দ্রুত চিন্তা করার ক্ষমতার উপর এ অংশের মার্কস নির্ভরশীল।
৪ সেট গাইড বই আর সম্ভব হলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিং এমবিএ ভর্তি পরীক্ষার অ্যানালাইটিক্যাল পার্টের প্রশ্নগুলি সলভ করে ফেলুন।
প্রতিদিনই মডেল টেস্ট দেবেন----গাইড থেকে আর সময় পেলে, ইন্টারনেটে বিভিন্ন ইন্ডিয়ান সাইট থেকে।
প্রশ্ন সহজ হবে, আর আপনি বোকামি করে ভুল করবেন, এটি আগেই মেনে নিন।
প্রিলির জন্য পড়বেন আর ভুলবেন, এরপর আবারও পড়বেন আর বারবার পড়েই যাবেন; এতে প্রশ্নোত্তরগুলির একটা ছবি মাথায় ‘সেট হয়ে যাবে’। সবকিছু পড়ার সহজাত লোভ সামলান। ধরুন, আপনি আম খাবেন। আম খাওয়ার আগে আমের বৈজ্ঞানিক নাম জেনেও আপনি আম খেতে পারেন। কোনো সমস্যা নাই। তবে আমি মনে করি, আগে আমটা খেয়ে নিয়ে পরে আমের বৈজ্ঞানিক নাম জানার ইচ্ছেটা পূরণ করা ভালো। যদি আমের চৌদ্দগুষ্ঠির খবর নিতে গিয়ে আম খাওয়াটাই না হয়, তাহলে তো আর হলো না। যা যা পড়া দরকার, সেগুলিতে একবার চোখ বুলিয়ে যাওয়াটাই কঠিন হয়ে পড়ে, আজাইরা ফালতু জিনিসপত্র পড়ার টাইম কোথায়? একটু বুদ্ধি করে পড়াশোনা করুন। যেমন, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও রাজধানীর নাম কিংবা পুরো সংবিধান মুখস্থ করে ফেললে হয়তো ২-৩ মার্কস পাবেন, কিন্তু ওই একই এফর্ট অন্যকিছুতে দিলে আপনি অন্তত ২০ মার্কস বাড়াতে পারবেন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলিতে আত্মতুষ্টির চাইতে মার্কসপ্রাপ্তি বেশি জরুরি। এই মুহূর্তে রিটেনের জন্য পড়াটা একেবারেই কমিয়ে দিন। চাইলে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকীয়কে বাংলা থেকে ইংরেজিতে আর ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করার কাজটি শুধু করে যেতে পারেন।


৩৬তম বিসিএস প্রিলি নিয়ে.........

যারা ৩৬তম বিসিএস প্রিলি দিয়েছেন, শুধু তাদের জন্য---

৩১তম বিসিএস ভাইভার আগেই ৩০তম বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়ে যাওয়ায় আর ৩১তম বিসিএস ভাইভা পরীক্ষা দিতে যাইনি। সে হিসেবে আমাকে ২০১১ সালের মে মাসে ৩১তম বিসিএস প্রিলির পর বিসিএস প্রিলি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আর পড়াশোনা করতে হয়নি। (এবং আমি পড়িওনি। চাকরির পড়াশোনা ভালোবেসে করার মতো কোনো পড়াশোনা নয়। সবাই এটা করে স্রেফ মার্কস তুলে চাকরি পেতে। অবশ্য কিছু কিছু লোক আছেন, যারা বড় বড় ভালোবেসে ‘বাংলাদেশের জাতীয় কবির নাম কী?’ জাতীয় প্রশ্নও ওয়ালে পোস্ট করে সবার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে করে ‘শিওর হয়ে নেন’ এবং পরবর্তীতে ছোট ছোট মার্কস পেয়ে ফেল করেন।) বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস এমনই এক চিড়িয়াটাইপের সিলেবাস যা অভ্যাস এবং অনভ্যাস দুটোতেই বিদ্যাহ্রাস পায়। আমার বিদ্যাহ্রাস পেয়েছে, এবং সে দোষ আমার একার নয়; সিস্টেমেরও!

এবারের ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নটি একেবারেই ট্র্যাডিশনাল ধাঁচের প্রশ্ন। বেসিক যেমনই হোক, যারা যত বেশি প্রশ্ন পড়ে গেছে, তাদের পক্ষে এ পরীক্ষায় ফেল করা তত বেশি কঠিন। ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন ছিল আমার দৃষ্টিতে এযাবতকালের সবচাইতে কঠিন প্রিলি আর রিটেনের ‘প্রশ্নওয়ালা’ বিসিএস। আমি নিজে ওই বিসিএস দিলে কতটা কী করতে পারতাম, সে সম্পর্কে অনেকের মতো আমি নিজেও সন্দিহান।

একটা সিক্রেট বলে দিই। খুব সম্ভবত ৩০তম আর ৩১তম বিসিএস প্রিলির জন্য সবচাইতে বেশি সংখ্যক প্রশ্ন সলভ করেছে, পুরো বাংলাদেশে এরকম ক্যান্ডিডেটদের তালিকা করা হলে আমার নাম ১ম ৫ জনের মধ্যেই থাকার কথা। একথা কেন বললাম? একথার মানে হল, আমি মনে করি, বিসিএস প্রিলিতে পাস করার জন্য ১০টা রেফারেন্স বই পড়ার চাইতে ১ সেট গাইড/ ডাইজেস্ট/ প্রশ্নব্যাংক পড়া বুদ্ধিমানের কাজ। বিসিএস পরীক্ষা জ্ঞানী হওয়ার পরীক্ষা নয়, মার্কস পাওয়ার পরীক্ষা।

একটা কথা বলে নেয়া ভাল। আমি সাধারণ জ্ঞানে অতি দুর্বল ধরণের ক্যান্ডিডেট ছিলাম। আপনি ভাবতেও পারবেন না, অতো দুর্বল ক্যান্ডিডেটও থাকে! কীভাবে সেটা কাজ চালানোর মতো করে আয়ত্তে এনেছি, সেকথা অন্য নোটে লিখেছি বলে এখানে আর লিখছি না। বাকি ৪টা বিষয় আমি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক ভালোভাবে পারতাম। আমি সবসময়ই বোঝার চেষ্টা করেছি, অন্যরা যেভাবে পড়ে, সেটাতে সমস্যাটা কোথায়। যে পথে গেলে পড়া কমে, সে পথে যাওয়ার সুবিধে হল এই, (যদি বেশি নাও করেন) আপনি অন্যদের সমান সময়ই পরিশ্রম করবেন, কিন্তু অন্যরা যে সময়ে একটা অপ্রয়োজনীয় কিংবা কম প্রয়োজনীয় জিনিস পড়ে, সে সময়ে আপনি একটা প্রয়োজনীয় জিনিসকে দুইবার রিভিশন দিয়ে দিতে পারবেন কিংবা আগে পড়া একটা প্রয়োজনীয় জিনিস এবং পড়া হয়নি এরকম একটা প্রয়োজনীয় জিনিস পড়ে ফেলতে পারবেন। হিসেব করে দেখুন, অন্যদের তুলনায় আপনার কাজের/ প্রয়োজনীয় পড়া হচ্ছে অন্তত দ্বিগুণ!

২০১১ সালের মে মাসের পর থেকে আজ পর্যন্ত বিসিএস প্রিলি নিয়ে আমাকে আর কিছু করতে হয়নি। এই দীর্ঘ সময়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রিলির পড়ার স্মৃতি ফিকে হয়ে এসেছে। গত শুক্রবার রুয়েটে ক্যারিয়ার আড্ডা ছিল। সারাদিন রুয়েটের অডিটোরিয়ামে কথা বলার পর সেদিন রাতের গাড়িতেই ঢাকায় আসি। গতকাল সারাদিন চাকরির কিছু কাজে দৌড়ের উপর ছিলাম। আবার সারারাত জার্নি করে সকালে সাতক্ষীরায় পৌঁছেই ৯টার মধ্যেই অফিসে ঢুকি। আজকে সন্ধ্যায় একটু ফ্রি হয়ে ৩৬তম প্রিলিতে ‘কাট মার্কস’ কত হতে পারে, এ সংক্রান্ত পোস্ট দেয়ার অনুরোধ/ আবদার রক্ষার্থে একটা প্রশ্ন ডাউনলোড করে পরীক্ষা দিতে বসে গেলাম। যেহেতু আমি বৃত্ত ভরাট করছি না, খাতায় অন্যান্য কিছুও পূরণ করতে হচ্ছে না, পরীক্ষার হলের ‘রহস্যময় টেনশন’টুকুও নিতে হচ্ছে না, সেহেতু ৫০ মিনিটের মধ্যেই পুরো প্রশ্ন সলভ করার নিয়তে হাতঘড়ি আর ক্যালকুলেটর ড্রয়ারে রেখে দেয়ালঘড়ি দেখে পরীক্ষা দিলাম। জেনে দাগালাম ১৫৪টি। এরপর ইন্টারনেট আর বিভিন্ন অনলাইন ফোরাম ঘাঁটাঘাঁটি করে সেগুলি চেক করে দেখলাম, ৫টি ভুল হয়েছে। মানে, আমি পেলাম ১৪৬.৫। ধরে নিচ্ছি, সত্যি সত্যি পরীক্ষা দিলে কনফিউশন আছে, কিন্তু পরীক্ষার হলে শেষপর্যন্ত ছাড়তে ইচ্ছে করে না এরকম আরও ১০টি বেশি দাগিয়ে ফেলতাম। ওগুলির মধ্যে ভুল হতো ৭টি, মানে ১৬৪টি দাগিয়ে ভুল করতাম ১২টি, মার্কস পেতাম ১৪৬। আমি যদি মোট ২০০ নম্বরকে এভাবে করে ভাগ করি : বাংলা (৩৫) + ইংরেজি (৩৫) + গণিত ও মানসিক দক্ষতা (৩০) + সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (৩০) + সাধারণ জ্ঞান (৫৫) + অন্যান্য (১৫), তবে হয়তোবা আমার মার্কস আসত এরকম : বাংলা (২৮) + ইংরেজি (৩২) + গণিত ও মানসিক দক্ষতা (২৯) + সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (২৪) + সাধারণ জ্ঞান (২২) + অন্যান্য (১১)। এর পুরো কৃতিত্ব কিন্তু ৩৬তম বিসিএস প্রিলির সহজ প্রশ্নের। বিসিএসটা ৩৫তম হলে ব্যাপারটা অন্যরকমও হতে পারত।

প্রশ্ন নিয়ে আমার কিছু ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ লিখছি :

এক। প্রশ্নটি অবশ্যই অতি গতানুগতিক। এ প্রশ্নে পাস করার জন্য মেধাবী হওয়ার কোনো দরকার নেই। গাইড বই/ জব সল্যুশন/ প্রশ্নব্যাংক/ ডাইজেস্ট/ মডেলটেস্ট গাইড ইত্যাদি ভালোভাবে পড়া থাকলেই যথেষ্ট।

দুই। এই প্রশ্নে কনফিউজিং/ ভুল প্রশ্ন কম ছিল।

তিন। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী অংশটা একটু কঠিন ছিল মনে হয়।

চার। কিছু প্রশ্ন নিয়ে কথা বলি :

১. বর্তমানে NAM এর সদস্যসংখ্যা- এই প্রশ্নের উত্তর নেই।
২. সুশাসনের পূর্বশর্ত হচ্ছে- এই প্রশ্নটি কনফিউজিং।
৩. LinkedIn এর ক্ষেত্রে কোনটি সঠিক? এই প্রশ্নটির ৪টি অপশন খেয়াল করলে মনে হয়, PSC এই প্রশ্নটি দিয়েছে, যাতে সবাইই ওটিতে ১ নম্বর করে পেয়ে যায়!
৪. যদি (25)^(2x+3) = 5^(3x+6) হয়, তবে x= কত? এই অংকটির ৪টি অপশন থেকে x এর মান প্রদত্ত সমীকরণে বসিয়ে সলভ করলে গতানুগতিকের ৫ ভাগের ১ ভাগ সময় লাগার কথা। x^2+y^2 = 185, x-y = 3 এর একটি সমাধান হল- এই অংকটির বেলায়ও আগের কথাটি প্রযোজ্য। ২ এর কত শতাংশ ৮ হবে? ..... এটিও!
৫. ১৫.৬০২৫ এর বর্গমূল = ? এই প্রশ্নটি দেয়াই হয়েছে যাতে কেউ কেউ বোকার মতো এটি করার জন্য সময় নষ্ট করে। কী দরকার ভাই? ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার সবচাইতে সহজ প্রশ্ন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ সরকারের বড় অর্জন কোনটি? এটিতেও তো ১ নম্বরই ছিল! অথচ সহজ টেকনিক জানা না থাকলে ওই বর্গমূল নির্ণয় করে একই ১ নম্বর পেতে অন্তত ২০ গুণ বেশি সময় লাগবে! কঠিন প্রশ্নে নম্বর কিন্তু সেই ১-ই!
৬. দুটি সমান্তরাল রেখা ক’টি বিন্দুতে ছেদ করে? এই প্রশ্নের উত্তর নেই। সঠিক বানান কোনটি? এটিও একই!
৭. Credit Tk 5000 _ my account. এই প্রশ্নটি যারা মোবাইলে ব্যাংকের মেসেজগুলি চেক করেন, তাদের পারতে ১ সেকেন্ডও লাগার কথা না।
৮. Verb of ‘Number’ is- এই প্রশ্নের উত্তর ২টি; number ও enumerate দুটিই হয়। মানে, এই প্রশ্নটিও কনফিউজিং।
৯. ‘Gitanjali’ of Rabindranath Tagore was translated by- এই প্রশ্নেরও উত্তর নেই, তবে PSC এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে নেয় W.B. Yeats অপশনটিকে। আচ্ছা, নেবেই কে বলল? নাও তো নিতে পারে! ইয়েটস্ তো বাংলা জানতেনই না! তাহলে গীতাঞ্জলি অনুবাদ করলেনটা কীভাবে? ......... অতো কথায় কাজ নেই। সংক্ষেপে বললে, এটিও একটা কনফিউজিং প্রশ্ন।

ভাল বুদ্ধি হল এই, কনফিউজিং প্রশ্নের উত্তর করারই দরকার নেই! ভুল প্রশ্নের কথা বলছেন? আচ্ছা, ভুল প্রশ্নের উত্তর করলেও যা, না করলেও তা। ওগুলিতে সবাইকেই অ্যাভারেজ মার্কস দিয়ে দেয়।

পাঁচ। ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষার কঠিন প্রশ্ন দিয়ে PSC ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার ক্যান্ডিডেটদেরকে এই ইঙ্গিত দিয়েছিল, “বেসিক শক্ত করতে প্রচুর প্রচুর পড়াশোনা কর, নাহলে প্রিলিতে ফেল করবে! শুধু বাজারের বই পড়ে বেশি লাভ নেই।” ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার সহজ প্রশ্ন দিয়ে PSC ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষার ক্যান্ডিডেটদেরকে এই ইঙ্গিত দিয়েছে, “বেসিক শক্ত করতে প্রচুর প্রচুর পড়াশোনা কর, নাহলে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষা একটা ‘গ্যাপ’ দিয়ে ‘ফিরে এলে’ প্রিলিতে ফেল করবে! তবে বাজারের বই না পড়েও বেশি লাভ নেই।”

পরশু থেকে শুরু করে এই নোট লেখার সময় পর্যন্ত ‘৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার কাট মার্কস কত হতে পারে’ জাতীয় ইনবক্স মেসেজ আর ফোন পেয়েছি অন্তত ১৫০০+। যারা যোগাযোগ করেছেন, তাদের মধ্যে ছিলেন ‘ভাল, মাঝারি, খারাপ’ ৩ ধরণেরই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থেকে পাস-করা ক্যান্ডিডেট। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে সাইলেন্টলি এ সংক্রান্ত কিছু পড়াশোনা করে কিছু বিষয় আমার মাথায় এসেছে।

এক। সহজ প্রশ্ন, তাই এখানে ০.৫ নম্বরও অনেককিছু!

দুই। প্রশ্ন সহজ, অতএব ঝটপট সব দাগিয়ে ফেলি খুশিতে! --- এই খুশির ঠ্যালায় আর স্নায়ুর চাপে অনেকেই অনেক প্রশ্নের উত্তর ভুল দাগিয়েছেন। (আমি পরীক্ষা দিলেও তা-ই করতাম।)

তিন। PSC যদি ১০ হাজার ক্যান্ডিডেটকে রিটেন দেয়ার সুযোগ দেয়, তবে কাট মার্কস হবে ১০৫-১০৯।
PSC যদি ১২-১৫ হাজার ক্যান্ডিডেটকে রিটেন দেয়ার সুযোগ দেয়, তবে কাট মার্কস হবে ৯৯-১০২।
PSC যদি ২০-২২ হাজার ক্যান্ডিডেটকে রিটেন দেয়ার সুযোগ দেয়, তবে কাট মার্কস হবে ৯১-৯৮।

এখন কিছু কথা বলে এই লেখাটি শেষ করছি।

এক। PSC এবার মোট কতজনকে রিটেন দেয়ার সুযোগ দেবে, সেটা তো আমরা কেউই জানি না। তবে আমার ব্যক্তিগত ধারণা, এবারের কাট মার্কস হবে ৯৩-১০০ এর মধ্যে।

দুই। জানা জিনিস ভুল শুধু আপনি একাই দাগাননি, যে ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম হবে, সেও দাগিয়েছে। তাই এটা নিয়ে এত দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই।

তিন। বিশাল বিশাল মার্কস পাবে দাবিকরা বিশাল বিশাল পণ্ডিতদের বেশিরভাগই বিশাল বিশাল ফেল করে আমাদের সবাইকে বিশাল বিশাল বিনোদন দেবে। রেজাল্টটা বের হতে দিন আর দেখুন না কী হয়! Just wait & see!!

চার। প্রিলির রেজাল্ট বের হওয়ার পর রিটেনের প্রিপারেশন নেয়ার জন্য সময় বেশি পাবেন না। বিসিএস পরীক্ষা মূলত রিটেনে ভাল করার পরীক্ষা। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, কেউ যদি সঠিকভাবে রিটেনের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করে পড়াশোনা করে, তবে উনার মেধাতালিকায় ১ম ১০ জনের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা ৯৫%। বাকি ৫% ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল। ভাগ্যে বিশ্বাস করেন না? ঠিক আছে, আপনি অন্তত ১বার প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে দেখুন!

রিটেনের পড়াশোনা কীভাবে শুরু করা যায়, এ নিয়ে পরে লিখব। (আগ্রহীরা রিটেনের প্রস্তুতিকৌশল নিয়ে আমার ফেসবুক নোটগুলি দেখে নিতে পারেন। রিটেন নিয়ে আমার অন্তত ১৫+টি ফেসবুক নোট আছে।) আপাতত এইটুকুই!

৩৫তম বিসিএস ভাইভা নিয়ে (১ম কিস্তি)

বিসিএস ভাইভা পরীক্ষার সাধারণ কিছু বিষয় নিয়ে লিখছি। তবে একটা কথা বলে নেয়া ভালো। ভাইভাতে ভালো করার অন্তত ১০০টি টেকনিক আছে, যেগুলির একটাও কাজ করে না। এটা মাথায় রেখে আমার টেকনিকগুলি পড়বেন।
১ভাইভাতে কোনো প্রশ্ন ইংরেজিতে করলে উত্তরটাও ইংরেজিতেই দিতে হবে। অনেকসময়ই বাংলায় প্রশ্ন করে ইংরেজিতে উত্তর দিতে বলা হয়। কোনোভাবেই বাংলায় উত্তর করার জন্য অনুমতি চাইবেন না। কাজ চালানোর মতো ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতাবৃদ্ধি করতে এই সময়ে যা যা করতে পারেন: এক। সাবটাইটেল অন করে আমেরিকান উচ্চারণের ইংরেজি মুভি দেখতে পারেন। দুই। বিটিভির রাত ১০টার সংবাদ, আল-জাজিরার সংবাদ, টেড টকস্, ইউটিউব থেকে ইংরেজিতে কথা বলার ধরণ খেয়াল করতে পারেন। তিন। মোটামুটি আপনার সমপর্যায়ের কোন বন্ধুর সাথে প্রতিদিন ৫ মিনিট ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন। চার। মোবাইলের ভয়েস রেকর্ডারটা অন করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইংরেজিতে কথা বলার প্র্যাকটিস করতে পারেন। পরে শুনে দেখলে নিজেই বুঝতে পারবেন, আপনার কোথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে। পাঁচ। আপনি ধরেই নেবেন, আপনি ভালো ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন। এরপর একজন ইংরেজ হয়ে ইংরেজিতে কথা বলার অভিনয় করুন। ছয়। সবসময়ই আপনার আশেপাশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইংরেজিতে ভাবুন এবং মাঝে মাঝে সেসব নিয়ে নিজের মনেই বলতে থাকুন। নিজের সাথে নিজেই ইংরেজিতে কথা বলুন। সাত। ইংরেজিতে কথা বলার সময় আঞ্চলিকতা পরিহার করার চেষ্টা করুন। আট। আস্তেধীরে ইংরেজিতে কথা বলবেন। তাড়াহুড়ো করলে তালগোল পাকিয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। নয়। কোন একটা থিমের উপর কয়েকজন মিলে ইংরেজিতে গল্প করতে পারেন। দশ। কখনওই আপনার ভুলগুলি নিয়ে মনখারাপ করবেন না। বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারেও চাকরি পেতে ইংরেজিতে কথা বলার অসাধারণ দক্ষতা থাকতে হয় না।
২আপনার ফার্স্ট ও সেকেন্ড ক্যাডার চয়েজ, আপনার সাবজেক্ট, সাম্প্রতিক নানান ইস্যু, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ, আপনার এলাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও সেখানকার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, আপনি কেন সিভিল সার্ভিসে আসতে চাইছেন ইত্যাদি সম্পর্কে মোটামুটি ফেয়ার একটা আইডিয়া রাখুন। নিয়মিত পেপার, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, কারেন্ট নিউজ, আজকের বিশ্ব, অর্থনৈতিক সমীক্ষা ইত্যাদিতে চোখ রাখুন।
৩ভাইভাতে ওপেন-এন্ডেড প্রশ্নে বেশি মার্কস বরাদ্দ থাকে। এই ধরণের প্রশ্নগুলির মধ্যে সবচাইতে কমনটা হলো: Introduce yourself. এরকম আরও অনেক প্রশ্ন ভাইভা গাইড কিংবা ইন্টারনেটে পাবেন। এগুলির উত্তর অন্য ১০জন যেভাবে দেয়, সেভাবে না দিয়ে একটু ভিন্নভাবে দেয়ার চেষ্টা করুন।
৪ঢোকার সময় আর বের হয়ে যাওয়ার সময় খুবই মার্জিতভাবে সালাম/ নমস্কার/ আদাব দিন। আপনি ঢোকার সময় যে ইম্প্রেশনটা তৈরি করবেন, সেটাই আপনার ভাইভার প্রশ্ন অনেকটাই নির্ধারণ করে দেবে।
৫ নিজেকে উৎসাহী শ্রোতা হিসেবে উপস্থাপন করুন। কোনো বিষয় নিয়েই তর্কে জড়াবেন না।
৬ কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে সেটি বিনীতভাবে বলুন। একটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মাঝখানে অন্য একজন প্রশ্ন করলে প্রথমজনের কাছ থেকে অনুমতি নিন।
। আপনার নিজের সম্পর্কে, আপনার পরিবার, আগের চাকরি, বাংলাদেশের সমস্যা সহ নানান বিষয় নিয়ে ইতিবাচকভাবে বলা শিখুন।
৮নার্ভাসনেস নিয়ে অতোটা ভাববেন না। এটা পরিস্থিতিই ঠিক করে দেবে। চাকরির পরীক্ষা নিয়ে নার্ভাস থাকাটাও একটা ভদ্রতা।
৯আই কনট্যাক্ট ঠিক রাখুন। দৃষ্টিকটুভাবে চোখ, ঘাড়, হাত নাচাবেন না।
১০ আপনার অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে আপনার ফার্স্ট চয়েজের একটা সম্পর্ক নিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন।
১১ আপনার প্রতিষ্ঠান এবং রেজাল্ট যা-ই হোক না যেন, আপনি কোনোভাবেই কোন চাকরির জন্য অপরিহার্য নন, এটা মাথায় রেখে ভাইভার জন্য প্রস্তুতি নিন।
১২কোনো প্রশ্নের উত্তরে কনফিউশন থাকলে সেটি যতটুকু জানেন, ততটুকুই আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলবেন। তবে একেবারেই কোনো ধারণা না থাকলে উত্তর না করাই ভালো।
১৩ আপনার অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট আপনার ভাইভার মার্কসে কোনো প্রভাব ফেলবে না। রেজাল্ট অতোটা ভালো না হলে ওটার পক্ষে মোটামুটিভাবে গ্রহণযোগ্য একটা কারণ তৈরি করে রাখবেন।
১৪ রাজনৈতিক বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে গেলেই ভালো।
১৫ আপনার ভাইভার পোশাক হবে একেবারেই ফর্মাল এবং অফিসারসুলভ। ধর্মীয় পোশাকে কোনো বাধা নেই।
১৬ভাইভা বোর্ডে কোনো অবস্থাতেই কোনো বিষয় নিয়েই মেজাজগরম করা যাবে না।
১৭ টেকনিক্যাল ক্যাডারের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজের সাবজেক্টের বেসিক বিষয়গুলি সম্পর্কে জেনে যাবেন।
১৮ একটু কনফিউসিং বানানের কিছু কমন শব্দ, সাধারণ কিছু অনুবাদ, জনপ্রিয় বই, ভূগোল ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে যাবেন।
১৯ আপনার প্রিয় শখ যা-ই বলুন না কেন, সেটি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখবেন।
২০ কথা বলার সময় যদি হঠাৎ তোতলাতে থাকেন কিংবা খেই হারিয়ে ফেলেন, তাহলে একটু থেমে এরপর আবার উত্তর করা শুরু করবেন।
৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় যারা পাস করেছেন, তারা সত্যিই অনেক যোগ্য এবং ভাগ্যবান। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা অন্যান্যবারের চাইতে কম। যে করেই হোক, এই দারুণ সুযোগটাকে কাজে লাগাতেই হবে! নিয়মিত প্রার্থনা করুন আর এই দীর্ঘ ক্লান্তিকর পথের শেষটা যাতে অনেক সুন্দর হয়, আপনার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সে চেষ্টা করে যান। আপনি সফল হবেনই!
ভাইভা নিয়ে আরও কিছু কথা বলবো আমার পরের লেখায়। ভালো থাকবেন।

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিকৌশল: বাংলা ও ইংরেজি : সুশান্ত পাল

ধরে নিই, আরও ২ মাস হাতে সময় আছে। বিসিএস মানেই লিখিত পরীক্ষার খেলা, যেটা সম্পূর্ণই আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণে। যাদের প্রস্তুতি অতোটা নেই, তারা এই ২ মাস বাসায় দৈনিক গড়ে অন্তত ১৫ ঘণ্টা করে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারলে চাকরিটা পাবেনই! যাদের প্রস্তুতি ভাল, তারা ওই পরিমাণ পড়তে পারলে পছন্দের প্রথম ক্যাডারটিতে মেধাতালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে থাকার কথা। এই সময়টাতে বাজে জিনিস পড়ে বাজে সময় নষ্ট করবেন না। কঠোর পরিশ্রম নয়, হিসেবি পরিশ্রমই বড় কথা। বাংলা ও ইংরেজির প্রস্তুতি নিয়ে কিছু কথা বলছি আমার মতো করে, আপনি আপনার মতো করে কথাগুলিকে কাজে লাগাবেন।
সিলেবাসের যাকিছু আগের বিসিএস-এও ছিল, তাকিছু ভালোভাবে আগের প্রশ্নগুলি থেকে পড়ে নিন। যে ক্যান্ডিডেট প্রশ্নের ধরণ যত ভাল বোঝে, তার প্রস্তুতি তত ভাল হয়। গাইডবইয়ের সাজেশন দেখে এবং প্রশ্নের ধরণ ও প্রাসঙ্গিকতা বুঝে নিজেই সাজেশন তৈরি করবেন। কারোর সাজেশনই ফলো করবেন না। এরপর সেই প্রশ্নগুলি কয়েকটি গাইড ও রেফারেন্স থেকে পড়ে ফেলুন। নোট করার সময় নেই, উত্তরগুলি অন্তত ৪টা গাইডবই থেকে দাগিয়ে দাগিয়ে পড়ুন। আমি মনে করি, ৫টা রেফারেন্স বই পড়ার চাইতে ১টা বাড়তি গাইডবই পড়া বেটার।
ব্যাকরণ অংশটি বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, ভাষা-শিক্ষা, দর্পণ, গাইডবই থেকে পড়ুন। প্রবাদ-প্রবচনের নিহিতার্থ খুবই সহজ ভাষায় প্রাসঙ্গিকভাবে লিখুন।
দর্পণ, বাংলাদেশের আর কলকাতার লেখকদের বই থেকে ভাব-সম্প্রসারণ দেখতে পারেন। উদাহরণ আর উদ্ধৃতি দিয়ে সময় নিয়ে খুবই চমৎকার গাঁথুনিতে ২০টি প্রাসঙ্গিক বাক্য লিখুন।
সারমর্ম ২-৩টি সহজ সুন্দর বিমূর্ত বাক্যে লিখতে হবে।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যবিষয়ক প্রশ্নের উত্তর গাইডবই, লাল-নীল দীপাবলি, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস---এই বইগুলো থেকে অপ্রয়োজনীয় অংশগুলি ‘বাদ দিয়ে বাদ দিয়ে’ পড়ুন। উদ্ধৃতি দিন, মার্কস বাড়বে।
বিসিএস পরীক্ষার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো অনুবাদ। যত কষ্টই হোক, প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকার আর্টিকেল আর সম্পাদকীয় থেকে একটি বাংলা থেকে ইংরেজি আর একটি ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ না করে ঘুমাতে যাবেন না। এতে আপনার আরও কিছু অংশের প্রস্তুতি হয়ে যাবে। এই অংশটি ফাঁকি না দিয়ে প্র্যাকটিস করলে আপনি আপনার কম্পিটিটরদের চাইতে অন্তত ৭০ মার্কস বেশি পাবেন।
কাল্পনিক সংলাপের জন্য পেপারে গোলটেবিল বৈঠকগুলোর মিনিটস্, টকশো, গাইডবই থেকে বিভিন্ন টপিক নিয়ে ধারণা নিন।
ভাষা-শিক্ষা আর বিভিন্ন গাইডবই থেকে পত্রলিখন পড়তে পারেন।
সুপরিচিত ৪০টা বই সম্পর্কে জেনে নিন গ্রন্থ-সমালোচনার জন্য।
সাজেশন রেডি করে ইন্টারনেট, গাইডবই, রেফারেন্স বই থেকে রচনা পড়ুন। যেকোনো ৩টি প্যাটার্নের উপর প্রস্তুতি নিন। সবার শেষে এটি ধরে পরীক্ষার শেষ হওয়ার ৭ মিনিট আগে উপসংহার লেখা শুরু করুন। উদ্ধৃতি দিন, বেশি লিখুন, প্রাসঙ্গিক লিখুন, বেশি মার্কস পান।
রিডিং কম্প্রিহেনশনের জন্য বেশি বেশি করে ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকীয় আর আর্টিকেলগুলি পড়বেন। প্যাসেজের আগে প্রশ্নগুলি অন্তত ৩ বার ভাল করে পড়ে ফেলুন। প্রশ্নে কী জানতে চেয়েছে, সে কিওয়ার্ড কিংবা কিফ্রেসটা খুঁজে বের করে আন্ডারলাইন করুন। এরপর প্যাসেজটা খুব দ্রুত পড়ে বের করে ফেলতে হবে, উত্তরটা কোথায় কোথায় আছে। এই অংশটি আইএলটিএস’য়ের রিডিং পার্টের টেকনিকগুলো অনুসরণ করে প্র্যাকটিস করলে খুব খুব ভাল হয়।
গ্রামার এবং ইউসেজের জন্য কয়েকটি গাইডবই থেকে প্রচুর প্র্যাকটিস করুন। অক্সফোর্ড অ্যাডভান্সড লার্নারস ডিকশনারি, লংম্যান ডিকশনারি অব কনটেম্পোরারি ইংলিশ, মাইকেল সোয়ানের প্রাক্টিক্যাল ইংলিশ ইউসেজ, রেইমন্ড মারফির ইংলিশ গ্রামার ইন ইউজ, ব্যারন্সের গ্রামারসহ আরো কিছু প্রামাণ্য বই হাতের কাছে রাখবেন। এসব বই কষ্ট করে উল্টেপাল্টে উত্তর খোঁজার অভ্যেস করুন, অনেক অনেক কাজে আসবে। ইংরেজিতে ভাল করতে হলে একজন ‘নারি’র প্রেমে আপনাকে পড়তেই হবে, সে ‘নারি’ ডিকশনারি।
সামারির জন্য প্রতিদিনই পত্রিকার সম্পাদকীয় আর আর্টিকেলগুলিকে সামারাইজ করুন। প্যাসেজটি ভালভাবে অন্তত ৫ বার খুব দ্রুত পড়ে মূল কথাটি কোথায় কোথায় আছে, দাগিয়ে ফেলুন। পুরো প্যাসেজটাকে ৬-৭টি ভাগে ভাগ করে প্রতিটি ভাগকে একটি করে সহজ বাক্যে নিজের মতো করে লিখুন। ব্যস্, হয়ে গেল সামারি!
লেটারের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য প্রতিদিন পত্রিকার লেটার টু দি এডিটর অংশটি পড়ুন, সাথে কিছু গাইডবই।
এসেইর জন্য বাংলাদেশের সংবিধানের ব্যাখ্যা, বিভিন্ন সংস্থার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল, কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকা ইত্যাদি সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখুন৷ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় বিভিন্ন লেখকের রচনা, পত্রিকার কলাম ও সম্পাদকীয়, ইন্টারনেট, বিভিন্ন সংস্থার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা, বিভিন্ন রেফারেন্স থেকে উদ্ধৃতি দিলে মার্কস বাড়বে৷ এই অংশগুলো লিখতে নীল কালি ব্যবহার করুন। কোটেশন ছাড়া রচনা লেখা রীতিমতো মহাপাপ!
বানান আর গ্রামার ভুল না করে খুব সহজ ভাষায় ইংরেজি লিখলে মার্কস আসবেই আসবে। আপনার বাংলা খাতাটি অন্য ১০জনের মতোই, অথচ আপনি মার্কস পাবেন একটুবেশি---এটা হয়তো আপনি আশা করেন, কিন্তু পরীক্ষক এটা কল্পনাও করেন না। কম প্র্যাকটিস, বেশি আরাম, কম মার্কস, রেজাল্ট জিরো---এটি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিন। লিখিত পরীক্ষায় পাস করা যতটা সোজা, চাকরি পাওয়াটা ততটাই কঠিন। প্রতিদিন পড়াশোনা করার সময় মাথায় রাখবেন, আপনি কারোর চাইতে ৩ ঘণ্টা কম পড়ার মানেই হল, আপনার চাইতে উনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ৩ গুণ বেশি। ৩০ বছর ধরে একটা চাকরি করবেন, আর সেটা পাওয়ার জন্য ২ মাস দৈনিক ৪-৫ ঘণ্টা ঘুমিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারবেন না, তা কীকরে হয়? পড়ুন, বুঝে পড়ুন এবং বেশি পড়ুন। যার রিডিং হ্যাবিট যত ভাল, তার রাইটিং স্টাইল তত উন্নত। লোকে চাকরি পায় দক্ষতা আর মেধায় নয়, চেষ্টা আর যোগ্যতায়। অতিমেধা, অতিবুদ্ধি, অতিপাণ্ডিত্য বেশিরভাগ সময়ই চাকরি পাওয়ার সকল সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেয়। কম কম বুঝুন, কম কম বলুন, বেশি বেশি পড়ুন; চাকরি নিশ্চয়ই পাবেন!

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিকৌশল: বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী : সুশান্ত পাল

বাংলাদেশ বিষয়াবলীর সিলেবাস বদলায়নি, প্রশ্নের ধরণটা একটু বদলেছে। কিছু কাজের কথা বলছি।
# অন্তত ৩-৪ সেট গাইডবই কিনে ফেলুন। বিভিন্ন রেফারেন্স বই, যেমন মোজাম্মেল হকের উচ্চমাধ্যমিক পৌরনীতি ২য় পত্র, বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে বই (যেমন, আরিফ খানের সহজ ভাষায় বাংলাদেশের সংবিধান), মুক্তিযুদ্ধের উপর বই (যেমন, মঈদুল হাসানের মূলধারা : ’৭১), নীহারকুমার সরকারের ছোটদের রাজনীতি, ছোটদের অর্থনীতি, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নাগরিকদের জানা ভালো, আকবর আলী খানের পরার্থপরতার অর্থনীতি, আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি, আব্দুল হাইয়ের বাংলাদেশ বিষয়াবলী ইত্যাদি বই পড়ে ফেলুন।
# ৪ ঘণ্টা না বুঝে স্টাডি করার চাইতে ১ ঘণ্টা প্রশ্ন স্টাডি করা অনেক ভালো। বেশি বেশি প্রশ্নের প্যাটার্ন স্টাডি করলে, কীভাবে অপ্রয়োজনীয় টপিক বাদ দিয়ে পড়া যায়, সেটা শিখতে পারবেন। বিভিন্ন প্রশ্ন অ্যাড কিংবা রিমুভ করে ৩-৪ সেট সাজেশনস্ বানান নিজেই। এটা প্রস্তুতি শুরু করার প্রাথমিক ধাপ। সবকিছু পড়ার সহজাত লোভ সামলান।
# অনলাইনে ৪-৫টা পেপার খুব দ্রুত পড়বেন। পেপার পড়ার সময় পেপারের কলামগুলো পড়ে পড়ে বুঝে নেবেন কোন কোন টপিক থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন হতে পারে। সাধারণ জ্ঞানে সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিকতা অনুসারে প্রশ্নের ধরণ বদলাতে পারে। বিভিন্ন কলাম পড়ার সময় কোন কলামিস্ট কোন বিষয় নিয়ে লেখেন, এবং কোন স্টাইলে লেখেন, সেটা খুব খুব ভাল করে খেয়াল করুন এবং নোটবুকে লিস্ট করে কলামিস্টের নাম, এর পাশে এরিয়া অব ইন্টারেস্ট, রাইটিং স্টাইল লিখে রাখুন। পরীক্ষার খাতায় উদ্ধৃতি দেয়ার সময় এটা খুব কাজে লাগবে।
# প্রয়োজনীয় চিহ্নিত চিত্র ও ম্যাপ আঁকুন৷ যথাস্থানে বিভিন্ন ডাটা, টেবিল, চার্ট, রেফারেন্স দিন৷ পেপার থেকে উদ্ধৃতি দেয়ার সময় উদ্ধৃতির নিচে সোর্স এবং তারিখ উল্লেখ করে দেবেন। পরীক্ষার খাতায় এমন কিছু দেখান, যেটা আপনার খাতাকে আলাদা করে তোলে। যেমন ধরুন, বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সোর্সসহ রেফারেন্স দিতে পারেন। উইকিপিডিয়া কিংবা বাংলাপিডিয়া থেকে উদ্ধৃত করতে পারেন। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে কে কী বললেন, সেটা প্রাসঙ্গিকভাবে লিখতে পারেন। পেপারের সম্পাদকীয় থেকে ফর্মাল উপস্থাপনার স্টাইলটা শিখে নিন।
# নোট করে পড়ার কোনো প্রয়োজন নেই৷ বরং কোন প্রশ্নটা কোন সোর্স থেকে পড়ছেন, সেটা প্রশ্নের পাশে লিখে রাখুন, রিভিশন দেয়ার সময় কাজে লাগবে৷ বাংলাদেশের সংবিধানের ব্যাখ্যা, বিভিন্ন সংস্থার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল, কিছু আন্তর্জাতিক পত্রিকা ইত্যাদি সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখুন৷ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে রাখুন৷
# বিভিন্ন রেফারেন্স, টেক্সট, গাইড ও প্রামাণ্য বই অবশ্যই পড়তে হবে৷ বিসিএস পরীক্ষায় বেশিরভাগ প্রশ্নই কমন পড়েনা৷ এসব বই পড়া থাকলে উত্তর করাটা সহজ হয়৷ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় বিভিন্ন লেখকের রচনা, পত্রিকার কলাম ও সম্পাদকীয়, ইন্টারনেট, বিভিন্ন সোর্স থেকে উদ্ধৃতি দিলে মার্কস বাড়বে৷ এই অংশগুলো লিখতে নীল কালি ব্যবহার করলে সহজে পরীক্ষকের চোখে পড়বে৷ চেষ্টা করবেন প্রতি পেজে অন্তত একটা কোটেশন, ডাটা, টেবিল, চার্ট কিংবা রেফারেন্স, কিছু না কিছু দিতে। পুরো সংবিধান মুখস্থ করার কোনো দরকারই নাই। যেসব ধারাগুলো থেকে বেশি প্রশ্ন আসে, সেগুলোর ব্যাখ্যা খুব ভালভাবে বুঝে বুঝে পড়ুন। সংবিধান থেকে ধারাগুলো হুবহু উদ্ধৃত করতে হয় না।
# লেখা সুন্দর হলে ভালো, না হলেও সমস্যা নেই৷ খেয়াল রাখবেন, যাতে লেখা পড়া যায়৷ প্রতি ৩-৫ মিনিটে ১ পৃষ্ঠা লেখার প্র্যাকটিস্ করুন৷
# কোনভাবেই কোনো প্রশ্ন ছেড়ে আসবেন না৷ উত্তর জানা না থাকলে ধারণা থেকে অন্তত কিছু না কিছু লিখে আসুন৷ ধারণা না থাকলে, কল্পনা থেকে লিখুন। কল্পনায় কিছু না এলে প্রয়োজনে জোর করে কল্পনা করুন! আপনি প্রশ্ন ছেড়ে আসছেন, এটা কোন সমস্যা না৷ সমস্যা হল, কেউ না কেউ সেটা উত্তর করছে৷
# মাঝে মাঝে বিভিন্ন টপিক নিয়ে ননস্টপ লেখার প্র্যাক্টিস করুন৷ বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার অভ্যাস বাড়ান৷ এতে আপনার লেখা মানসম্মত হবে৷ কোনো উত্তরই মুখস্থ করার দরকার নেই৷ ধারণা থেকে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন৷ কেউই সবকিছু ঠিকঠাক লিখেটিখে চাকরি পায় না। রিটেনে সবাই-ই বানিয়ে লেখে। ঠিকভাবে বানিয়ে লেখাটাও একটা আর্ট।
এখন সিলেবাস অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করছি।
শর্ট কনসেপচুয়াল নোটস্: আগের বছরের প্রশ্ন, রেফারেন্স বই, গাইড বই, পেপার ঘেঁটে ঘেঁটে কী কী টীকা আসতে পারে লিস্ট করুন। এরপর সেগুলো গুগল করে ইন্টারনেট থেকে পড়ে ফেলুন। সাথে পেপার-কাটিং, ওয়ার্ড ফাইলে সেভ করা পেপারের আর্টিকেল, গাইড বই আর রেফারেন্স বই তো আছেই! এ অংশে উত্তরের শেষে আপনার নিজস্ব বিশ্লেষণ দিলে মার্কস বাড়বে।
অ্যানালাইটিক্যাল কোয়েশ্চেনস্: যত বেশি সম্ভব তত পয়েন্ট দিয়ে প্যারা করে করে লিখবেন। এ অংশে ১টি ১৫ মার্কসের প্রশ্ন উত্তর করার চাইতে ৪+৬+৫=১৫ মার্কসের প্রশ্ন উত্তর করাটা ভাল। প্রশ্নের প্রথম আর শেষ প্যারাটি সবচাইতে আকর্ষণীয় হওয়া চাই। প্রচুর কোটেশন দিন। বিভিন্ন কলামিস্টের দৃষ্টিকোণ থেকে কোন ইস্যুকে ব্যাখ্যা করে উত্তরের শেষের দিকে নিজের মত করে উপসংহার টানুন। কোন মন্তব্য কিংবা নিজস্ব মতামত থাকলে সেটি অবশ্যই লিখুন।
প্রবলেম সলভিং কোয়েশ্চেন: আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে কিছু কথা লেখা থাকবে কিংবা কোন একটা সমস্যার কথা দেয়া থাকবে। সেটিকে বিশ্লেষণ করে নানা দিক বিবেচনায় সেটার সমাধান কী হতে পারে, ওটি আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এবং আপনার নিজের মতামত সহকারে পয়েন্ট আকারে লিখুন। এটিতে ভাল করার জন্য নিয়মিত পেপার পড়ার কোন বিকল্প নেই।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তরই নেটে পাবেন। তাই সবচাইতে ভাল হয় যদি টপিকগুলো গুগলে সার্চ করে করে পড়েন। প্রয়োজনে টপিকের নাম বাংলায় টাইপ করে সার্চ করুন। উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, বিভিন্ন সংস্থার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে প্রশ্নের উত্তর পড়লে সময় বেঁচে যাবে, মার্কসও ভাল আসবে। পেপারে দৈনিক এবং সাপ্তাহিক আন্তর্জাতিক পাতাটি, দ্য হিন্দু, দি ইকনোমিস্ট, টাইমস অব ইন্ডিয়া সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পত্রিকা থেকে প্রয়োজনীয় আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন। ইন্টারনেট ঘেঁটে বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্য, সমালোচনা পড়ে নিন। এতে লেখা ধারালো হবে। বিভিন্ন ম্যাপ, ডাটা, চার্ট, টেবিল, পর্যালোচনা, নিজস্ব বিশ্লেষণ, সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে সেটির প্রাসঙ্গিকতা ইত্যাদির সাহায্যে লিখলে আপনার খাতাটি আলাদা করে পরীক্ষকের চোখে পড়বে। প্রশ্ন অতো কমন পড়বে না। তাই রিডিং হ্যাবিট বাড়ানো ছাড়া এ অংশে ভাল করা কঠিন। কিছুই মুখস্থ করার দরকার নেই। বারবার দাগিয়ে দাগিয়ে পড়বেন। পরীক্ষার হলে নিজের মতো করে বানিয়ে লিখে দেবেন।
আপনার স্বপ্নের যত্ন নিন, স্বপ্নও আপনার যত্ন নেবে। সামনের সময়টাতে আপনার চিন্তাভাবনা ও কাজকর্মকে আপনার স্বপ্নকেন্দ্রিক করে ফেলুন। বিশ্বাস করে নিন, যে সময়টাতে আপনি আপনার স্বপ্ন নিয়ে ভাবছেন না, সে সময়টাতে আপনি আসলে কিছুই ভাবছেন না! যারা আপনার স্বপ্নকে নিয়ে বাজে কথা বলে, তাদেরকে আপনার জীবন থেকে সাময়িকভাবে হলেও সরিয়ে দিন। আপনার স্বপ্নকে স্পর্শকের স্পর্ধায় ছুঁয়ে ফেলার সুন্দর মুহূর্তটিতে আপনাকে স্বাগতম!


বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিকৌশল: গাণিতিক যুক্তি, মানসিক দক্ষতা, সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি : সুশান্ত পাল

গলফ খেলায় ভাল খেলোয়াড়রা দুটো ব্যাপার মাথায় রাখেন: এক। বল। দুই। গর্তটা। গর্তে বলটা ফেলার জন্য গর্তের সাথে বলটার সংযোগের একটা দৃঢ় কল্পনা মাথায় আসার পরেই উনারা বলে আঘাত করেন। আর সাধারণ মানের খেলোয়াড়রা দূরত্ব, আশেপাশের মাঠের পরিবেশ, দর্শকদের প্রতিক্রিয়া---এসব নিয়েই বেশি ভাবতে থাকেন।
বিসিএস পরীক্ষার জন্য দুটো ব্যাপার মাথায় রাখুন: এক। প্রস্তুতিকৌশল। দুই। চাকরিটা। বিসিএস নিয়ে যত বেশি গবেষণা করবেন, ততই আপনার প্রস্তুতি খারাপ হবে। আপনার স্বপ্নটা মাথায় রেখে আর কোনোকিছুকেই তোয়াক্কা না করে প্রচুর পরিশ্রম করে প্রস্তুতি নিন। দেখবেন, চূড়ান্ত গেজেটে আপনার রোল নাম্বারটা আছে!
এই সময়টাতে আপনার মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করে, এমনসব ব্যাপার আপনার জীবন থেকে সাময়িকভাবে হলেও একেবারেই সরিয়ে দিন। সবাই সবকিছু পছন্দ করে না। এটা ঠিক আছে। কিন্তু অনেক নির্বোধই আরেকজনের পছন্দ নিয়ে নানান মন্তব্য করতে পছন্দ করে। ওরকম লোকজন থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
গাণিতিক যুক্তির জন্য যেকোন তিনটি গাইড বই কিনে সলভ্ করে ফেলুন। ম্যাথস্ ভাল না পারলে প্রতিদিনই প্র্যাকটিস করুন। বিসিএস পরীক্ষায় ম্যাথসে ফুল মার্কস পাওয়ার জন্য সায়েন্সের স্টুডেন্ট হতে হয় না। প্রতিটি স্টেপ বিস্তারিতভাবে দেখিয়ে ম্যাথস্ করবেন। কোন সাইডনোট, প্রাসঙ্গিক তথ্য---কিছুই যেন বাদ না যায়। কোন অংশটা কোথা থেকে দেখতে পারেন, সেটা নিয়ে বলছি।
সরল: আগের বছরের প্রশ্ন, গাইড বই। সরলের উত্তর সবার শেষে করলে ভাল হয়।
বীজগাণিতিক রাশিমালা, বীজগাণিতিক সূত্রাবলী, উৎপাদকে বিশ্লেষণ, একমাত্রিক ও বহুমাত্রিক সমীকরণ, একমাত্রিক ও বহুমাত্রিক অসমতা, সমাধান নির্ণয়, পরিমিতি, ত্রিকোণমিতি: আগের বছরের প্রশ্ন, গাইড বই। চাইলে ৯ম-১০ম শ্রেণীর গণিতের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় সলভ্ করে নিতে পারেন।
ঐকিক নিয়ম, গড়, শতকরা, সুদকষা, লসাগু, গসাগু, অনুপাত ও সমানুপাত, লাভক্ষতি, রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, বৃত্ত সংক্রান্ত উপপাদ্য, পিথাগোরাসের উপপাদ্য, অনুসিদ্ধান্তসমূহ: আগের বছরের প্রশ্ন, গাইড বই
সূচক ও লগারিদম, সমান্তর ও জ্যামিতিক প্রগমন, সেটতত্ত্ব, ভেনচিত্র, সংখ্যাতত্ত্ব: গাইড বই এবং ৯ম-১০ম শ্রেণীর গণিতের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়
বিন্যাস ও সমাবেশ, স্থানাংক জ্যামিতি: গাইড বই, ১১শ শ্রেণীর বই থেকে সংশ্লিষ্ট অধ্যায়
সম্ভাবনা: গাইড বই, ১২শ শ্রেণীর বিচ্ছিন্ন গণিতের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়
মানসিক দক্ষতার প্রশ্নগুলো একটু ঘোরানো হওয়ারই কথা। মাথা ঠাণ্ডা রেখে, ভালভাবে প্রশ্ন পড়ে, এদিকওদিক না তাকিয়ে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে উত্তর করতে হবে। অবশ্যই ৪-৫টা গাইডবই ভালভাবে পড়ে ফেলুন। গাইড বই, আইকিউ টেস্টের বই, আর গুগলে সার্চ করে বিভিন্ন সাইটে ঢুকে এই অংশটি নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে পারেন। এ অংশে ফুল মার্কস পাবেন না, এটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিন।
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অংশের জন্য আগের বছরের প্রশ্নগুলো আর ২-৩টা গাইড বইয়ের সাজেশনসের প্রশ্নগুলো প্রথমেই যথেষ্ট সময় নিয়ে কয়েকবার খুব ভালভাবে পড়ে ফেলুন। এই অংশে সাধারণত সায়েন্সের স্টুডেন্টরা মার্কস কম পায়, এর কারণ হল, অহেতুক আত্মবিশ্বাসের জোরে অনেকেই ঠিকভাবে প্রস্তুতি নেয় না। বিজ্ঞানে বানিয়ে বানিয়ে লিখুন একটু কম। প্রয়োজনীয় চিহ্নিত চিত্র, সংকেত, সমীকরণ দিতে পারলে আপনার খাতাটা অন্য দশজনের খাতার চাইতে আলাদা হবে। মাথায় রাখুন, ১০ মার্কসের একটা প্রশ্ন উত্তর করার চাইতে ৪+৩+৩=১০ মার্কসের ৩টা প্রশ্নের উত্তর করা ভাল। এখন কোন অংশটি কোথা থেকে পড়তে পারেন, সেটা নিয়ে বলছি।
আলো, শব্দ, চৌম্বকবিদ্যা: গাইড বই, ৯ম-১০ম শ্রেণীর পদার্থবিজ্ঞান, ১১শ-১২শ শ্রেণীর পদার্থবিজ্ঞান ১ম ও ২য় পত্র
অম্ল, ক্ষারক, লবণ: ৯ম-১০ম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান, ১১শ শ্রেণীর রসায়নবিজ্ঞান
পানি, আমাদের সম্পদসমূহ, পলিমার, বায়ুমণ্ডল, খাদ্য ও পুষ্টি, জৈবপ্রযুক্তি, রোগব্যাধি ও স্বাস্থ্যের যত্ন: গাইড বই, ইন্টারনেট, ৯ম-১০ম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান, ৯ম-১০ম শ্রেণীর ভূগোল
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি: গাইড বই, ইন্টারনেট, পিটার নরটনের ইন্ট্রোডাকশন টু কম্পিউটারস, উচ্চমাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষা ১ম ও ২য় পত্র
ইলেকট্রিকাল এবং ইলেকট্রনিক টেকনোলজি: গাইড বই+ উচ্চমাধ্যমিক পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্রের বই
সিলেবাস দেখে টপিক ধরে ধরে কোনটা কোনটা দরকার, শুধু ওইটুকুই ওপরের বইগুলো থেকে পড়বেন (গাইডেও অনেককিছু দেয়া থাকে যেগুলোর কোন দরকারই নেই)। ,চাইলে পুরো বই না কিনে যতটুকু দরকার শুধু ততটুকু ফটোকপি করে নিতে পারেন। ইন্টারনেটে টপিকগুলোকে গুগল করে করে পড়লে খুবই ভাল হয়। বেশি বেশি প্রশ্ন স্টাডি করে প্রশ্নের ধরণ বোঝার চেষ্টা করুন, এতে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন পড়ে সময় নষ্ট হবে না।
এই সময়টাতে এদিকওদিক না দৌড়ে, বাসায় বেশি সময় দিন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রধান সমস্যাটাই হল, প্রিপারেশন প্রিপারেশন ভাব, প্রিপারেশনের অভাব। বিসিএস লিখিত পরীক্ষা দেয়া অতো সোজা না। এটা ঠিক, এ পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ফেলতে পারবেন, কারণ এ পরীক্ষায় ফেল করা আসলেই কঠিন। শুধু পাস করার সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে ভাইভা পরীক্ষা দিতে পারবেন, আর কিছু না। আপনার টার্গেট পাস করা নয়, চাকরি পাওয়ার মতো বেশি নম্বর পেয়ে পাস করা। যদি ঠিকভাবে বুঝেশুনে পরিশ্রম করেন আর সেটাকে কাজে লাগাতে পারেন, তবে ভালভাবে পাস করার যথার্থ পুরস্কার হিসেবে চাকরিটা পাবেন।

‘বিসিএস পরীক্ষায় ভাল করতে হলে’ – সুশান্ত পাল

যারা বিসিএস পরীক্ষা দেবেন, প্রস্তুতিপর্বে তাদের প্রথমেই যেখানে পরিবর্তনটা আনতে হবে সেটা হলো মাইন্ডসেটে। পরীক্ষার ধরণ বদলে গেছে, এর মানে, পরীক্ষার ধরণ আপনার সাথে যারা পরীক্ষা দেবে, সবার জন্যই বদলে গেছে। আপনি এখানে ইউনিক কেউ নন। আগের পরীক্ষাগুলি সহজ ছিল, এর মানে কিন্তু এ-ই নয় যে, আগের পরীক্ষাগুলি দিয়ে যারা চাকরি পেয়েছেন, তারা আপনার চাইতে কম মেধাবী।
পরীক্ষার ধরণের ওপর ওদের কোনো হাত ছিল না। এখনকার মতো পরীক্ষা হলে ওরাও নিজেদেরকে ওভাবে করেই প্রস্তুত করতো। কাউকে আপনার চাইতে অযোগ্য বলার আগে উনার সাথে প্রতিযোগিতা করে উনাকে হারিয়ে দিয়ে এরপর বলুন। আপনার নিজেকে যোগ্য বলার আগে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেখান কাজে, মুখে নয়। মুখে কোনো কিছু বলে ফেলার জন্য কোনো বাড়তি যোগ্যতা লাগে না, শুধু কথা বলতে জানলেই হয়।
প্রস্তুতি নিচ্ছেন, অথচ সেটা ঠিকমতো কাজে লাগছে না। কেন? আপনার প্রস্তুতির ধরণ ঠিক নেই। নিজে যা করছেন, সেটা হয়তো ঠিক, কিন্তু যথেষ্ট নাও হতে পারে। নোকিয়া কোম্পানি সবকিছুই ঠিকঠাক করছিলো, কাজে কোনো ফাঁকি ছিল না, ওদের প্রোডাক্টের কোয়ালিটিও ভাল ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও বন্ধ হয়ে গেল। কেন? ওরা যে পদ্ধতিতে ব্যবসা করছিলো, সেটাকে বদলানোর, প্রোডাক্টকে আপডেট করার সময় এসে গিয়েছিলো, কিন্তু ওরা সেটা না করেই ওদের মতো করে ব্যবসা করে যাচ্ছিলো। ওদের যারা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান, তারা তো আর বসে নেই! অন্যরা যখন পরিবর্তনকে সহজে গ্রহণ করছিল, তখন ওরা পুরোনোকেই আঁকড়ে ধরে বসেছিল।
শুধু ঠিক কাজটি করাটাই বড় কথা নয়, দেখতে হবে সে ঠিক কাজটি করা কতটুকু দরকার। আপনি কেমন, সেটা আপনি নিজেকে কেমন ভাবেন, সে ভাবনা নির্ধারণ করে দেয় না। আপনি আসলেই কেমন, সেটা আপনাকে বুঝতে হবে। নিজের কাছে সবারই নিজেকে সেরা মনে হয়, অন্য কারোর চাইতে ভাল মনে হয়। সেটা আপনাকে কিছু বোকা আত্মতৃপ্তি ছাড়া আর কিছুই দেবে না। আপনি যেমন ছিলেন, তেমনই থেকে যাবেন। আপনি নিজেকে কী ভাবেন, সেটা কেউই কেয়ার করে না। আপনি আসলে কী, সেটাই অন্যরা দেখে। আপনার মূল্যায়ন আপনার কাজের মাধ্যমে, আপনার ভাবনার মাধ্যমে নয়। মুখে মুখে কিংবা মনে মনে হাতিঘোড়া মেরে কী লাভ? নিজের কল্পনার রাজ্যে সবাইই তো রাজা।

আপনি যা যা পারেন না, তা তা পারা দরকার কিনা, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। যদি দরকার হয়, তবে সেসবকিছু কীভাবে পারতে হয়, সেটা নিয়ে ভাবুন। একটা কাগজে লিখে ফেলুন, আপনার কোন কোন দুর্বলতা আপনাকে কাটিয়ে উঠতে হবে। এক্ষেত্রে নিজেকে বিন্দুমাত্রও ছাড় দেয়া যাবে না। আপনি ওটা পারেন না, এটা কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হলো, ওটা আপনার পারা দরকার কিন্তু পারার জন্য আপনি কোনো বুদ্ধি বের করছেন না, সেটা। যারা বিসিএস ক্যাডার হতে পারে আর যারা পারে না, তাদের মধ্যে পার্থক্য বেশি নয়। তিন জায়গাতে পার্থক্য আছে বলে মনে হয়। এক। প্রস্তুতি নেয়ার ধরণে। দুই। পরীক্ষা দেয়ার ধরণে। তিন। ভাগ্যে। আপনি তৃতীয়টাতে বিশ্বাস করেন না? আচ্ছা ঠিক আছে, বিসিএস পরীক্ষা দিন, বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন। যেকোনো পরীক্ষায় ভাল করার ৪টি বুদ্ধি আছে: পরিশ্রম কী নিয়ে করবো, পরিশ্রম কেন করবো, পরিশ্রম কীভাবে করবো—এই ৩টি জেনেবুঝে সঠিকভাবে কঠোর পরিশ্রম করা। বিসিএস পরীক্ষা দেশের সবচাইতে কঠিন পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় ভাল করতে বুদ্ধিমত্তা কিংবা মেধার চাইতে পরিশ্রমের মূল্য বহুগুণে বেশি। বুদ্ধিমত্তা বড়োজোর আপনি কীভাবে করে সবচাইতে ভালভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন, সেটা ঠিক করে দিতে পারে। কিন্তু আসল কাজটাই হল কিছু নির্ঘুম রাতকাটানো অক্লান্ত পরিশ্রমের।

আপনি সফল হওয়ার আগ পর্যন্ত যে বিষয়ে আপনি এখনও সফল হতে পারেননি, সে বিষয়ে কোনো কথাই বলবেন না, চুপচাপ কাজ করে যাবেন, চূড়ান্ত সাফল্য আসার পর কথা বলবেন। অবশ্য, সাফল্য আসার পর কথা বলতেও হয় না। সাফল্য নিজেই অনেক জোরে কথা বলতে পারে! আপনি সফল হওয়ার পর, আপনি কীভাবে সফল হলেন, সেটা অন্যরা নিজ দায়িত্বেই জেনে নেবে, আপনাকে নিজ থেকে কিছুই বলতে হবে না। আমার কাছে মনে হয়, মুখ বন্ধ রেখে কাজ করলে আপনার কাজটা সহজ হবে। কোনো বিষয়ে বলার মতো অবস্থান তৈরি না হলে সে বিষয়ে না বলাই ভাল। আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে কীভাবে অ্যাকাডেমিক পরীক্ষায় ভাল করা যায়, আমি বলি, “জানি না”। কারণ সেটা আমি জানি কিংবা না জানি, আমার অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট বলে দেয়, সেটা নিয়ে বলার কোনো যোগ্যতা আমার নেই। অনার্স-মাস্টার্সে সেকেন্ড ক্লাস পাওয়া স্টুডেন্ট ফার্স্ট ক্লাস পাওয়ার বুদ্ধি দেবে কীভাবে? আপনি যা নিয়ে বাহবা পাওয়ার যোগ্য নন, তা নিয়ে মিথ্যে বাহবা শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে কখনোই প্রকৃত বাহবা পাবেন না।
বড় পরীক্ষায় ভাল করার জন্য অন্ধের মতো খাটলে বেশি একটা ভাল রেজাল্ট করা যায় বলে মনে হয় না। কারোর প্রিপারেশন টেকনিক ফলো করার আগে এটা অন্তত ১০ বার ভেবে নিন, উনি ফলো করার মতন কিনা। আপনার প্রতিদিনের পারফরম্যান্স যেন আগেরদিনের চাইতে ভাল হয়, এটা মাথায় রেখে কাজ করবেন। পরীক্ষায় নতুন নতুন নানান বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, এর মানে হল, আপনাকেও প্রস্তুতির ধরণে নতুনত্ব আনতে হবে। আপনার আগে কেউ কম পড়ে পার পেয়ে গেছে মানে কিছুতেই এটা নয় যে, আপনিও কম পড়ে পার পেয়ে যাবেনই!
প্রতিটি পরীক্ষাতেই কিছু কিছু দিক থাকে যেগুলি নিয়ে কেউই আগে থেকে কিছু বলতে পারে না। ওই ব্যাপারগুলিকে যে যত সুন্দরভাবে হ্যান্ডেল করতে পারবে, তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। আপনাকে কোনো বিষয়েই অনেক পণ্ডিত হতে হবে না। যেটা করতে হবে সেটা হল, সব বিষয়েরই বিভিন্ন বেসিকগুলি ভালোভাবে জানতে হবে। এক্ষেত্রে যে যত বেশি জেনে নিতে পারবে, প্রতিযোগিতায় সে তত বেশি এগিয়ে থাকবে। যে প্রশ্নগুলির উত্তর বেশিরভাগ ক্যান্ডিডেটই জানে না, সেগুলির উত্তর আপনি জানার অর্থ হলো, আপনি বেশিরভাগের চাইতে এগিয়ে আছেন এবং পরীক্ষার পর এই অজুহাত দেখাতে হবে না যে ‘প্রশ্ন কঠিন ছিল, তাই পারিনি’। যে উত্তর করতে পারে না, সে-ই বলে প্রশ্ন কঠিন। যেমন, আমার কাছে অনার্সের পরীক্ষাগুলির প্রায় সব প্রশ্নই কঠিন ছিল কারণ আমি প্রায় প্রশ্নেরই উত্তর পারতাম না। বিভিন্ন ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ক্ষমতা বাড়ান। পড়ার অভ্যাস না বাড়ালে এটি সম্ভব নয়। যে বেশি বই পড়ে, তার ভেতরে এক ধরণের শক্তি তৈরি হয়। সেই শক্তিই তাকে অন্যদের চাইতে অনেকদূর এগিয়ে রাখে। রিডিং হ্যাবিটের চাইতে বড় ঐশ্বর্য কমই আছে। ভাল বই এবং লেখা পড়লে, ভাল মুভি দেখলে, ভাল জায়গায় ঘুরতে গেলে আপনার ভাবনার উন্নতি ঘটবে। এতে আপনার লেখার মান অন্যদের চাইতে ভাল হবে। আপনাকে কেন অন্যদের চাইতে বেশি মার্কস দেয়া হবে যদি আপনিও অন্যদের মতোই হন? আপনি আপনার বন্ধুর চাইতে প্রতিদিন ৩০ মিনিট কম ঘুমালেই আপনার বন্ধুর চাইতে ৩ বছর আগে চাকরিটা পাবেন। এটাই বাস্তবতা।
অনেকেই ইংরেজি নভেল পড়তে পারেন না। এক্ষেত্রে দুই ধরণের লোক দেখা যায়। বেশিরভাগই পড়তে পারেন না বলে পড়া শুরু করেন না। কেউ কেউ পড়তে শেখার জন্য সহজ ভাষায় লেখা একটি নভেল নিয়ে পড়া শুরু করেন; হোক সেটি হ্যারি পটার সিরিজ, তবুও। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ধরণের লোকেরা প্রথম ধরণের লোকের চাইতে এগিয়ে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। আমরা গরীব বলেই ধনীদের এই ভাষাটি আমাদের শিখতে হয়। যে যত ভালভাবে এটা শিখতে পারে, সে তত ধনীদের মতো, অতএব, যোগ্য, এটাই দেশ ও সমাজ ধরে নেয়। যা-ই পড়েন না কেন, পড়ার সময় দুটো ব্যাপার মাথায় রেখে পড়বেন। এক। লেখক কী বলতে চাচ্ছেন। দুই। আপনি লিখলে কী লিখতেন। এতে আপনার সৃজনশীল ক্ষমতা, মানে লেখার ক্ষমতা বাড়বে। প্রচুর পড়তে হবে, যা পড়েছেন তা থেকে কী শিখলেন সেটা বুঝতে হবে, যা শিখলেন তা কাজে লাগাতে হবে। শেখার সময় জেনে শিখতে হবে, যা শিখছেন তা শেখার আদৌ কোনো দরকার আছে কিনা। ফালতু জিনিস শেখার চাইতে সেই সময়ে ঘুমানোও ভাল।
বিসিএস পরীক্ষায় ভাল করার জন্য যে চাকরিটা আপাতত করছেন, সেটা ছাড়ার কোনো দরকার নাই। অনেকসময়ই সেটা ছেড়ে দেয়া মানে, আপনার ফ্যামিলিকে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। আমাদের কলিগদের অনেকেই সিভিল সার্ভিসে আসার আগে অন্য চাকরিতে ছিলেন। আপনি চাকরি ছাড়বেন তখনই যখন আপনি বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাবেন। এর আগ পর্যন্ত চাকরিটা ধরে রাখুন। আমি অনেককেই দেখেছি চাকরি ছেড়ে দেয়ার ফলে যে সুবিধেটা হয়েছে, সেটা হল ঘুমানোর সময়টা আগের চাইতে বেড়ে গেছে। সামনে সময় কম? একটু ভাবুন তো, সময়টা কি শুধু আপনার জন্যই কম? আপনি আগে পড়েননি? ভাল কথা, এখন কম ঘুমান। পড়তে না পারার পেছনে আপনার হাতে হাজারটা কারণ থাকতে পারে, কিন্তু সেইসব কারণের দাম আপনার কাছে অনেক হলেও পুরো দুনিয়ার কাছে তার কানাকড়িও দাম নেই।
সাফল্যের কোনো অজুহাত লাগে না, সব অজুহাতই শুধুই ব্যর্থতার। ব্যর্থতা কী? ব্যর্থতা হল এমন কোনোকিছু করতে না পারা যা আমি করতে চাইছি। কিংবা, এমন কোনোকিছুতে ব্যর্থ হওয়া, যার বদলে এর চাইতে ভালকিছু করা যায় না। আমি ব্যবসায় ব্যর্থ হলেও সেটাকে আমি ব্যর্থতা মনে করি না, কারণ আমি ব্যবসাকে বড় করে দেখিনি। আমার জীবনে আমি কোনটাকে প্রাধান্য দেবো, সেটা সম্পূর্ণই আমার নিজস্ব ব্যাপার। যদি সেটাতে অসফল হই, তবেই আমি ব্যর্থ, এর আগ পর্যন্ত না। তাই কেউ যদি ব্যবসা করে গাড়িবাড়ি করে ফেলে, সেটা আমাকে একটুও বিচলিত করে না, ঈর্ষান্বিত করে না। আমি খুব হাসিমুখেই উনার সফলতাকে উদযাপন করতে পারি। আমি যা করছি, সেটাতে আমার পক্ষে যতটুকু যাওয়া সম্ভব, আমি ততটুকু যেতে পারলাম কিনা, আমি যা করতে ভালোবাসি তা নিজের মতো করে করতে পারছি কিনা, এসবই আমাকে ভাবায়। আমি সিভিল সার্ভিসে আছি, যিনি এই সার্ভিসে নেই তার অবস্থানটা যদি বিচার করতেই হয়, তবে তার নিজের ক্ষেত্রটা বিবেচনায় এনেই তাকে বিচার করা উচিত। তবে সবচাইতে ভাল পন্থা হল, কারোর অবস্থানকেই বিচার না করে নিজেরটা নিয়ে নিজের মতো করে থাকা। বেশিরভাগ অসুখী মানুষই ভীষণ জাজমেন্টাল হয়ে থাকেন।
আপনি কোথায় পড়াশোনা করছেন সেটা কোনো ব্যাপারই না। যদি কেউ সেটা নিয়ে কিছু বলে, তবে দয়া করে ওর মূর্খতাকে নিজগুণে ক্ষমা করে দিন। আপনি যে অবস্থানে আছেন, সেটা আপনার অতীতের কাজের ফল। একইভাবে, আপনি ভবিষ্যতে যে অবস্থানে থাকবেন, সেটা আপনার বর্তমানের কাজের ফল। আগেও ফাঁকি দিয়েছেন, এখনও ফাঁকি দিচ্ছেন, এর মানে হল, ভবিষ্যতটাও ফাঁকির ফলাফলস্বরূপ খুবই বাজেভাবে কাটার কথা। এটা মেনে নিতে পারলে অবশ্য ফাঁকি দিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারেন। সেটাও একদিক দিয়ে খারাপ না। আপনার পরিশ্রম করার ধরণ দেখে যারা হাহাহিহি করবে, তাদেরকে দেখে আপনিও নিশ্চিন্তে নিঃশব্দে হাহাহিহি করতে পারেন, কারণ তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছে যে তারা আপনার চাইতে পিছিয়ে থাকবে। যারা ভূতের মতো খাটে, তাদেরকে আমরা পাগল বলি। আমি দেখেছি, এ পৃথিবীতে পাগলরাই সবসময় এগিয়ে থাকে।
প্রতিদিনই পড়তে বসুন। দুএকদিন পড়া বাদ যেতে পারে, সেটাকে পরেরদিন বেশি পড়ে পুষিয়ে নিন। বিসিএস পরীক্ষা মৌসুমি পড়ুয়াদের জন্য নয়। পড়ার সময় অবশ্যই অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলি বাদ দিয়ে পড়বেন। কোন কোন বিষয়গুলি অপ্রয়োজনীয়? এটা বোঝার জন্য অনেক অনেক বেশি করে প্রশ্নের ধরণ নিয়ে পড়াশোনা করুন। সমজাতীয় পরীক্ষার প্রশ্ন সম্পর্কে ভালভাবে ঘাঁটাঘাঁটি না করে বিসিএস পরীক্ষার ভাল প্রস্তুতি নিতে পারবেন না। রেফারেন্স বই পড়বেন, তবে বইয়ের সবকিছু পড়তে যাবেন না। বিসিএস পরীক্ষা বেশি জানার পরীক্ষা নয়, বরং যা দরকার তা জানার পরীক্ষা। সবকিছু পড়লে পণ্ডিত হবেন, বুঝেশুনে পড়লে ক্যাডার হবেন। বেকার পণ্ডিত অপেক্ষা চাকরিজীবী গর্দভ উত্তম। পছন্দ আপনার! প্রচুর প্রচুর প্রশ্ন পড়ুন। গাইড বইয়ে, প্রশ্নব্যাংকে, মডেল টেস্টের গাইডে, যেখানেই প্রশ্ন পান না কেন। ৪টা নতুন রেফারেন্স বই পড়ার চাইতেও ২টা পুরোনো গাইড বই রিভিশন দেয়া কিংবা ১টা নতুন গাইড বই পড়ে শেষ করা অনেকবেশি কাজের।
হাতের লেখার ক্ষেত্রে দুটো ব্যাপার মাথায় রাখবেন। যাতে পড়া যায় এবং যাতে অনেক দ্রুত হয়। সুন্দর হাতের লেখার গুরুত্ব আছে, তবে হাতের সুন্দর কিন্তু স্লো, কিছু প্রশ্ন বাদ পড়ে যায়, কিংবা দুএকটি উত্তর মনের মতো লেখা যায় না, ওরকম সুন্দর হাতের লেখার কোনোই দাম নেই। বাংলা কিংবা ইংরেজি, যেকোনোটিতেই উত্তর করতে পারেন। আপনার লেখার স্টাইল, প্রেজেন্টেশন, নতুনত্ব, প্রাসঙ্গিকতা, পরিধি, এসব ঠিক রাখলেই হলো। তবে একটা ব্যাপার বলে নিই। আমি নিজে প্রথম প্রথম ইংরেজিতে পরীক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইংরেজিতেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছিলাম। পরে দেখলাম, ভালভাবে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বইপত্র, স্টাডি ম্যাটেরিয়ালস পাচ্ছি না। তখন বাংলায় প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম। আঁকার জন্য পেন্সিল আর কোটেশন দেয়ার জন্য নীল কালির কলম ব্যবহার করতে পারেন। লেখার চর্চা না থাকলে পরীক্ষার হলে সেটা হাওয়া থেকে আসবে না। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফ্রিহ্যান্ড রাইটিং প্র্যাকটিস করুন। হোক ফেসবুকে, তাতেও কোনো সমস্যা নাই। বরং ওটা আরও ভাল। বন্ধুদের কমেন্টের রিপ্লাই দিতে গিয়েও ভাষার অনেক খুঁটিনাটি শেখা যায়। যেকোনো দরকারি বিষয় নিয়ে থামতে বলার আগ পর্যন্ত লেখার দক্ষতা অর্জন করুন। কীভাবে ভাল লেখা যায়? পড়ার অভ্যাস বাড়িয়ে ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখে। এসব কাজ শুরু করার জন্য বেশি গবেষণার কিছু নেই। শুরু করে দিলেই পারবেন। অতিভাবনা ও অতিপণ্ডিতি প্রিপারেশনকে নষ্ট করে দেয়।
পড়াশোনাটা প্রথম থেকেই শুরু করুন। যদি তা না করেন, তাহলে যে সময়ে অন্যরা রিভিশন দেবে, সে সময়ে আপনাকে নতুন জিনিস পড়তে হবে। পড়ার সময় এবং খাতায় লেখার সময় মাথায় রাখবেন, প্রশ্নের শুরুটা এবং শেষটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুরুটা এমনভাবে করুন, যাতে আপনার উত্তরটা পড়তে ইচ্ছে করে, আর শেষটা এমনভাবে করুন যাতে আপনার বিশ্লেষণী ক্ষমতা সম্পর্কে পরীক্ষকের মনে ইতিবাচক ধারণা জন্মে। কী বলতে যাচ্ছেন, সেটা নিয়ে শুরুতেই আভাস দেবেন, আর শেষে এসে এতক্ষণ কী লিখলেন, সেটা নিয়ে নিজের মতামত দেবেন। ইংরেজির ক্ষেত্রে সহজ স্টাইলে নির্ভুলভাবে লেখার চেষ্টা করুন। ভাল ইংরেজি লিখতে ভাল ভোকাবুলারি লাগে না, পণ্ডিতি ফলানোর লেখার স্টাইলও জানতে হয় না। শুধু বানানে ভুল করবেন না, গ্রামারে ভুল করবেন না। প্রাসঙ্গিকভাবে লিখে যান। ব্যস্! মার্কস আসবেই আসবে!
লেখার চর্চা থাকলেই লেখা যায়। বিসিএস পরীক্ষা স্পেশালিষ্টদের পরীক্ষা নয়, জেনারেলিস্টদের পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় ভাল করতে হলে অল্প জিনিস নিয়ে বেশি বেশি জানার চাইতে বেশি জিনিস নিয়ে অল্প অল্প জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক এবং বিরোধপূর্ণ ইস্যু নিয়ে না লেখাই ভাল। দেশ কিংবা সরকারকে ছোট করে দেখায়, এমন একটা বর্ণও খাতায় লিখবেন না। খাতায় ডাটা, চিত্র, ম্যাপ, টেবিল, ফ্লোচার্ট, কোটেশন, নানান রেফারেন্স, সংবিধান থেকে উদ্ধৃতি, ইত্যাদি যত বেশি দেবেন, আপনার মার্কস তত বাড়বে। আগে থেকে পড়াশোনা না করলে এসবকিছু খাতায় দেয়াটা অনেকটাই অসম্ভব। ইন্টারনেটে টপিক সার্চ করে করে পড়াটা খুব খুব কাজের। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রতিদিনই একটা বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয়কে ইংরেজিতে এবং ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকীয়কে বাংলায় অনুবাদ করুন। ইংরেজি সম্পাদকীয়টিকে অনুবাদ করার পাশাপাশি সামারাইজও করে ফেলবেন। এরপর সে টপিক নিয়ে নিজে এক পৃষ্ঠা লিখবেন। যত কষ্টই হোক না কেন, এই কাজটি না করে কোনোভাবেই ঘুমাতে যাবেন না। শব্দের অর্থ কাউকেই জিজ্ঞেস করবেন না, নিজে ডিকশনারি খুঁজে খুঁজে বের করবেন। অনলাইনে দেশিবিদেশি পত্রিকার আর্টিকেল এবং বিভিন্ন সংস্থার ওয়েবসাইটগুলিতে নিয়মিত ঢুঁ মারুন। খুবই কাজে দেবে। টিভি-রেডিও’র সংবাদ নিয়মিত শুনলে কম পরিশ্রমে অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস মনে রাখতে পারবেন। সবকিছু পড়বেন না, সবকিছু শুনবেন না। অতো বাজে সময় নেই। যা যা পরীক্ষায় কাজে লাগে, শুধু সেগুলির সাথেই থাকুন। পেপার পড়ার সময় সামনের পাতা, সম্পাদকীয় পাতা, আর্টিকেলসমূহ, সংবাদ বিশ্লেষণ, কেস স্টাডি, ব্যবসাবাণিজ্য, আন্তর্জাতিক নানান ইস্যু, ইত্যাদি ভালভাবে পড়বেন। মাঝেমাঝে এসব পড়ে পড়ে নিজে কিছু লেখার চেষ্টা করতে পারেন, কাজে দেবে। পেপার পড়তে প্রতিদিন ১.৫-২ ঘণ্টার বেশি ব্যয় করার দরকার নেই। পুরো পেপারে যা যা বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়, শুধু তা-ই পড়বেন। অনলাইনে পেপার পড়া সবচাইতে ভাল। এটি সময় বাঁচায়।
কারোর সাজেশনস ফলো করবেন না। নিজের সাজেশনস নিজেই তৈরি করুন। অ্যাড-রিমুভ, এডিট করে অন্তত ৪-৫ সেট। এজন্য আগের বছরের প্রশ্ন, বিভিন্ন গাইডের সাজেশনস, এবং নিজের আইকিউকে কাজে লাগান। পরীক্ষার হলে বড় প্রশ্ন লেখার সময় প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড কিংবা কিফ্রেইস ঠিক করে করে সেগুলিকে বিশ্লেষণ করে লিখুন। এভাবে করে লিখলে অনেক আইডিয়া আসবে লেখার। প্রস্তুতি নেয়ার সময় কোনো উত্তরই মুখস্থ করার দরকার নেই। কারণ সে প্রশ্নটি পরীক্ষায় নাও আসতে পারে আর মুখস্থ করতে গিয়ে যে সময়টা নষ্ট হবে, সে সময়ে আরও ৪টা ভিন্ন প্রশ্ন কিংবা আরও ৪টা বই থেকে একই প্রশ্নটিই পড়ে নেয়া সম্ভব। এটাই বেশি ফলপ্রসূ। যত বেশি সোর্স থেকে পড়বেন, তত বেশি বানিয়ে লিখতে পারবেন। কোনটা কোন সোর্স থেকে পড়ছেন, সেটা একটা নোটবুকে প্রশ্নের পাশে পাশে লিখে রাখুন। রিভিশন দেয়ার সময় খুব কাজে লাগবে। কোন কোন অংশে বুদ্ধি করে পড়লে গড়পড়তার চাইতে বেশি মার্কস তোলা সম্ভব, সেগুলিকে চিহ্নিত করে সেগুলির উপর বেশি জোর দিন। কম্পিটিশনে আসতে চাইলে কম্পিটিশনে আসার ক্ষেত্রগুলি কী কী, সেটা তো আগে জানতে হবে, তাই না?
এটা ঠিক যে, সবচাইতে ভালটা প্রথমবারেই পাওয়া যায়! মেধাতালিকায় থাকা প্রথম ১০ জনের বেশিরভাগই প্রথমবারে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সফল-হওয়া ক্যান্ডিডেট। তবুও যারা প্রথমবারের মতো বিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছেন না, তারা এটা কখনোই মাথায় আনবেন না যে আপনার অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। বরং এটা মাথায় রাখুন, যদি সামনেরবারও চাকরিটা না পান, তবে অন্তত আরও এক বছর নষ্ট হবে। বিসিএস পরীক্ষায় মেধাতালিকায় প্রথমদিকে থাকা অনেকেরই প্রথম বিসিএস-এ হয়নি। যদি আপনিও ওরকম প্রথমদিকে থাকতে পারেন, তবে আপনার এই যন্ত্রণা অনেকটাই চলে যাবে। সেই চেষ্টাই করুন। আমার কাছে তো মনে হয়, প্রত্যেকটি বিসিএস-ই আপনার জন্য প্রথম বিসিএস। কীরকম? আপনি যদি ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন, তবে সেটিই তো আপনার জন্য প্রথম, কারণ এর আগে আপনি কখনোই ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষা দেননি। বিসিএস পরীক্ষা চুম্বনের মতো। প্রতিটি চুম্বনই প্রথম চুম্বন, প্রতিটি বিসিএস-ই প্রথম বিসিএস। একইভাবে দ্বিতীয়বার চুমু খাওয়া সম্ভব নয়, একইভাবে দ্বিতীয়বার বিসিএস পরীক্ষা দেয়া সম্ভব নয়। অনেকেই প্রথমবারে প্রিলিই পাস করতে পারল না, আর পরেরবারে গিয়ে মেধাতালিকায় স্থান করে নিল। এমন দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি আছে। সবকিছুই নির্ভর করে নিজের ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য, আর পরিশ্রমের উপর।
আপনার সক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিদিন কত সময় পড়াশোনা করবেন, সেটা ঠিক করে নিন। এখানে সক্ষমতা বলতে আমি বোঝাতে চাইছি, ৮০% মানসিক সক্ষমতা আর ২০% শারীরিক সক্ষমতা। আমার নিজেরটাই বলি। আমি প্রতিদিন ১৫ ঘণ্টা পড়াশোনা করার সময় বেঁধে দিয়েছিলাম এবং যতদিন বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম, এই ১৫ ঘণ্টার নিয়মটি খুব স্ট্রিক্টলি ফলো করতাম। ১৫ ঘণ্টা মানে কিন্তু ১৪ ঘণ্টা ৬০ সেকেন্ড, এর কম কিছুতেই না। কখনো কখনো সময়টা এর চাইতে বেড়ে যেত, কিন্তু অসুস্থ হয়ে না পড়লে কমানো যাবে না, এটাই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। এতে আমার যে লাভটি হয়েছে, সেটি হলো, শেষ মুহূর্তের বাড়তি চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পেরেছি। স্নায়বিক চাপের ফলে অনেকেরই ভাল প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা খারাপ হয়ে যায়। অতিরিক্ত চাপ আত্মবিশ্বাসও কমিয়ে দেয়, যেটা ভীষণ আত্মঘাতী। অনেকেই হয়তো এর চাইতে কম সময় পড়ে ম্যানেজ করতে পেরেছেন। এটা নির্ভর যার যার পড়ার ধরণ এবং বেসিকের উপর। আমি খুব মেধাবী কখনোই ছিলাম না বলে আমাকে বেশি সময় ধরে পড়তে হয়েছে। যতক্ষণই পড়াশোনা করুন না কেন, কোয়ান্টিটি স্টাডির চাইতে কোয়ালিটি স্টাডিই বেশি দরকার। যে সময়টাতে পড়াশোনা করছেন, নিজের ১০০%ই দিয়ে পড়াশোনা করুন। সপ্তাহের শেষ দিনে ৪-৫ ঘণ্টা আগের ৬ দিনে যা যা পড়েছেন, সেগুলি খুব দ্রুততার সাথে একবার রিভিশন দিন। কোনো পড়া প্রথমবার পড়ার সময় প্রয়োজনীয় এবং কঠিন অংশগুলি অবশ্যই রঙিন কালিতে দাগিয়ে দাগিয়ে পড়বেন।
কোচিং সেন্টারে যাওয়া ঠিক কিনা, এটা আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করেন। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো, কোচিং সেন্টারে যাওয়া যাবে যদি আপনি ওদের সব কথাকেই অন্ধভাবে বিশ্বাস না করেন। আপনাকে খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে, আপনার কী করা উচিত, কী করা উচিত নয়। ওদের কথা শোনার সময় এটা ধরে ফেলতে হবে কোন কোন কথা স্রেফ কোচিং সেন্টারে স্টুডেন্টের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বলা। ওদের গৎবাঁধা ছকে চললে আপনি হয়তোবা ক্যাডার হতে পারবেন, কিন্তু খুব ভাল করতে পারবেন না। এর চাইতে ভাল বিভিন্ন গাইড বই, রেফারেন্স বই, ইন্টারনেট আর পেপার থেকে পড়াশোনা করা। কোচিং সেন্টারে যেতে পারেন যদি আপনি নিজের ব্যক্তিগত পড়াশোনাকে ঠিক রেখে ওদের পরামর্শকে বুঝেশুনে ফলো করতে পারেন। কীরকম? ধরুন, পরেরদিন কোচিং-এ মডেল টেস্ট। এর জন্য আগেরদিন কিছুতেই আপনার ব্যক্তিগত পড়াশোনাকে ব্যাহত করা যাবে না। প্রয়োজনে এর জন্য এক্সট্রা আওয়ার খাটতে হবে। তাতে কোচিং-এর পরীক্ষায় মার্কস কম পেলেও অসুবিধা নেই। আমি কোচিং সেন্টারে টপারদেরকে বিসিএস পরীক্ষায় টপার হতে খুব একটা দেখিনি। আপনি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হবেন নিজের মনটাকে খুঁতখুঁত করা থেকে বাঁচানোর জন্য, নিজেকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে ভালভাবে প্রস্তুত করার জন্য, সব ক্লাস করে পয়সা উশুল করার জন্য নয়। কোচিং সেন্টারের সব ক্লাস করার চাইতে বোকামি আর হয় না। অনেক ছেলেই কোচিং সেন্টারে প্রতিদিন যায় সুন্দরী মেয়ে দেখার জন্য আর অনেক মেয়েই যায় ছেলেদের পয়সায় শিঙাড়া খাওয়ার জন্য। চাকরি নাই, অথচ ফুটানির শেষ নাই। নিজের সাথে এর চাইতে বড় ফাঁকিবাজি আর হয় না। আপনি কোচিং সেন্টারে যাবেন কীভাবে শুরু করবেন সেটা বুঝতে, কিছু টেকনিক শিখতে, মডেল টেস্টগুলি নিয়মিত দিতে আর আপনার অবস্থানটা জানতে। পড়াশোনার ব্যাপারটা সম্পূর্ণই নিজের উপর নির্ভর করে।
বিসিএস পরীক্ষায় ভাল করার ক্ষেত্রে অন্য কারোর পরামর্শ অনুসরণ না করে নিজের মতো করে গুছিয়ে পড়াশোনা করাটাই সবচাইতে ভাল। তবে একথা মাথায় রাখলে সুবিধা, চাকরির পরীক্ষায় ভাল করা আর অ্যাকাডেমিক পরীক্ষায় ভাল করার টেকনিকগুলিতে অসংখ্য অমিল রয়েছে। আমি কয়েকজন অনার্স এবং মাস্টার্সে টপারকে বিসিএস প্রিলিতেই ফেল করতে দেখেছি। আরেকটা জিনিস সবসময়ই মাথায় রাখুন। সেটি হলো, কখনোই বিসিএস নিয়ে বেশি লোকের সাথে কথা বলবেন না, আলাপ-পরামর্শ করতে যাবেন না। শুধু যারা এ পরীক্ষায় সফল হয়েছেন, তাদের সাথেই এটা নিয়ে কথা বলুন। তেমন কাউকে পাওয়া না গেলে কারোর সাথেই কোনো কথা বলার দরকার নেই। বিসিএস ক্যাডারের সাথে বকবক করলে আর বিসিএস ক্যাডারের বকবকানি শুনলেই বিসিএস ক্যাডার হওয়া যায় না। পদ্ধতিগতভাবে পড়াশোনা করে যান, নিজের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখুন, জয় আপনার হবেই হবে!
কিছু কথা বলতে ইচ্ছে করছে:
এক। আপনার ভালথাকাটা কারোর না কারোর স্বপ্ন। এই ভালমানুষটিকে ভাল রাখতে হলেও ভাল থাকুন।
দুই। আপনি পরীক্ষায় খারাপ করলে কেউ না কেউ অনেক শান্তি পাবে। আর কিছু না হোক, শুধু উনাকে অশান্তিতে রাখতে হলেও পরীক্ষায় ভাল করুন।
তিন। আপনি ভাল একটা অবস্থানে যেতে পারলে আপনার জন্য আপনার বাবা-মা, কাছের মানুষগুলি সম্মানিত হবেন। তাদেরকে গর্বিত করতে ভাল করে পড়াশোনা করুন।
চার। আপনি যে অক্লান্ত পরিশ্রমটা করে যাচ্ছেন, সেটা নিয়ে যাতে কেউ হাসাহাসি করতে না পারে, সেটার জন্য হলেও চাকরিটা পেয়েই দেখান।
পাঁচ। আপনার সামর্থ্য নিয়ে আপনার আশেপাশের যে মূর্খরা আজেবাজে বকছে, তাদেরকে সমুচিত জবাবটা আপনার কাজের মাধ্যমে দিয়ে দিন! সত্যি বলছি, অনেকবেশিই স্বস্তি পাবেন।
সব কথার শেষকথাটি: বিসিএস প্রিলি, রিটেন, ভাইভা নিয়ে আমার অন্তত ৩০+টি লেখা আছে যেগুলি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছিলো। লেখাগুলির সবকটিই আমার ফেসবুক নোটসে পাবেন। আমার সব নোটই পাবলিক-করা, তাই আমার বন্ধু-তালিকায় থাকুন আর না-ই থাকুন, পড়তে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন। আমার এই লেখাটির বাইরে প্রয়োজনীয় অনেককিছুই ওগুলিতে পেয়ে যাবেন।
গুড লাক!!
সুশান্ত পাল