Wednesday, December 23, 2015

৩৬ বিসিএসে ইংরেজিতে ভালো করার উপায়

 ইংরেজিতে দুর্বলতার কারণে অনেকেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগেন। আজকে রইলো বিসিএস পরীক্ষার ইংরেজি বিষয়ের উপর পরামর্শ।
আসুন সিলেবাসে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক-
PART- I : Language
A) Parts of Speech: The Noun (The Determiner, The Gender, The Number), The Pronoun, The Verb-(The Finite: transitive, intransitive; The Non-finite: participles, infinitives, gerund; The Linking Verb, The Phrasal Verb, Modals), The Adjective, The Adverb, The Preposition, The Conjunction.
B) Idioms & Phrases: Meanings of Phrases, Kinds of Phrases, Identifying Phrases
C) Clauses: The Principal Clause, The Subordinate Clause (The Noun Clause, The Adjective Clause, The Adverbial Clause & its types).
D) Corrections: The Tense, The Verb, The Preposition, The Determiner, The Gender, The Number, Subject-Verb Agreement
E) Sentences & Transformations: The Simple Sentence, The Compound Sentence, The Complex Sentence, The Active Voice, The Passive Voice, The Positive Degree, The Comparative Degree, The Superlative Degree.
F) Words: Meanings, Synonyms, Antonyms, Spellings, Usage of words as various parts of speech, Formation of new words by adding prefixes and suffixes.
G) Composition: Names of parts of paragraphs/letters/applications
লক্ষ্য করুন, সিলেবাসে মোটামুটি একটা গ্রামার বইয়ের সূচীপত্র তুলে দেয়া হয়েছে। তারপরেও একটা ডিটেইলস কিছু যে আছে সেটা ভালই হয়েছে। আর ভোকাবিউলারিকে গ্রামারের সাথে দেয়া হয়েছে।
ইংরেজীর জন্য বই
English for Competitive Examination – এ বইটা আগের বছরের বিসিএস এবং অন্যান্য পরীক্ষার প্রশ্নের সলিউশনের জন্য অনেকেই অনুসরণ করে। কিছু ভুল বাদ দিলে এটা থেকে প্রশ্নের ভাল ধারণা হয়। ইংরেজির সব গাইডই ভুলে ভরা, তাই সাবধান হতে হবে। এই বইটা থেকে আগের বছরের প্রশ্ন সমাধান হবে, কিন্তু গ্রামারের বিস্তারিত নিয়ম পড়া হবে না। গ্রামার এর জন্য যে কোন ইন্টার মিডিয়েট লেভেলের গ্রামার বইয়েই চলবে। আগে যেটা পড়েছেন সেটাই পড়ুন। আগে যারা P. C. Das, বা Wren & Martin English Grammar পড়েছেন, তাঁরা অবশ্যই এগুলোই পড়বেন। আর আগে যারা এগুলো পড়েননি, তাঁরা ৩৫-তমের জন্য এখন এগুলো শুরু করার দরকার নেই। অন্য যেটা পড়েছেন, তাতেই হবে। সেটা Advance Learners এর মত হলেও চলবে। এখন এই গ্রামার বই আপনাকে বেসিক নিয়ম শিখাবে, তাতেই ৭০% কাজ হয়ে যায়। কিন্তু এইসব গ্রামার বইতে চাকরির প্রশ্নের মত করে নিয়মগুলো অনেক সময়ই দেয়া থাকে না। তাই গ্রামারের নিয়মের জন্য বাজারের যে কোন জব গ্রামার বই (s@ifur’s, mentors, oracle যা আছে বাজারে- যে কোনটা) দেখুন।
এবার গ্রামারের যে সব টপিক সিলেবাসে দেয়া আছে সেগুলো দেখি
প্রথমে দেখি G) Composition: Names of parts of paragraphs/letters/applications:
এখানে ২টি জিনিসের কথা বলা হয়েছে।
(১) ইংরেজী চিঠি/এপ্লিকেশানের বিভিন্ন অংশের নাম – এটা তো আমরা স্কুলে vii-viii এ পড়েছি। ওই ক্লাসের গ্রামার বইয়ে এখনো আছে। নিজে খাতায় লিখে ফেলতে পারেন। আর সহজ জিনিস, তাই নতুন যে বিসিএস গাইডগুলো বের হবে তাতে থাকবে।
(২) parts of paragraphs: একটা প্যারাগ্রাফের কি কি অংশ থাকে সেটা সিলেবাসে আছে। এটা নতুন সংযোজন মনে হচ্ছে। কিন্তু জিনিস সোজা। একাডেমিক রাইটিংয়ে একটা paragraph-এ ৩টা পার্ট থাকেঃ (i)Topic Sentence (ii) Body বা supporting sentence (iii) Concluding Sentence.
আমি একটা উদাহরণ দেই। ধরুন, আমি একটা আর্টিকেল লিখছি – ‘Why Bangladeshi Peacekeepers are more reliable than the Pakistani peacekeepers.’ আসলে আমি থিসিস করছি শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের সাফল্য – অন্য দেশের সাথে আমাদের তুলনা নিয়ে। তাই এই উদাহরণটাই মাথায় আসল। যাই হোক, ধরুন এতে বাংলাদেশ যে ভাল, তার কয়েকটা ইস্যু খুঁজে পেলাম। এখন যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে লিখলে সেটা একাডেমিক রাইটিং হবেনা। প্রতিটা ইস্যুর জন্য একটা করে paragraph লিখব।
ধরি ১ম ইস্যু হলো – বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যাকগ্রাউন্ড আর পাকিস্থানের সামরিক শাসনের কারণে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে অধিক গ্রহণযোগ্য মনে করে। এই ইস্যুটা নিয়ে যে paragraph টা লিখব তাতে তিনটা অংশ থাকবে।
(i)Topic Sentence
(ii) Body বা supporting sentence
(iii) Concluding Sentence. এখানে Topic Sentence মানে প্রথম বাক্যে–এ শুধু ইস্যুটা বলব। মানে ‘main idea’ টা। এই বাক্যের মাধ্যমে নিশ্চিত হবে যে, এই paragraph টা কি নিয়ে লিখব। মানে এই topic sentence দিয়ে paragraph টাকে control করা হয়। যাতে অন্য বিষয় চলে না আসে। তাই topic sentence কে controlling sentence বা controlling idea বলা হয়। Topic Sentence এর পর কয়েকটা বাক্যে এই ইস্যুটিকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করলো। এই ডিটেইলস অংশকে বলে Body বা supporting sentence. এতে উদাহরণ, কোটেশান, কারণ, ডেটা (reasons, examples, statistics, facts, quotations) এসব থাকবে। আর সবশেষ বাক্যে আবার পুরো paragraph টাকে summarize করে। এজন্য শেষ বাক্যটিকে Concluding Sentence বা Concluding remark বলে।
সিলেবাসের গ্রামার অংশের (A) থেকে (E) তে শুধু টপিকের নাম। এগুলো গ্রামার বই থেকে পড়ে ফেলুন। এখানে Transformation of Sentence আর Correction এর টপিক সরাসরি দেয়া আছে। এই এই টপিকগুলোতে জোর দিন। মানে আগে যেমন কারেকশানের কোন আগা-মাথা ছিল না, এখন ধারণা করা যাবে কোথা থেকে আসবে।
(F) Words: Meanings, Synonyms, Antonyms, Spellings, Usage of words as various parts of speech, Formation of new words by adding prefixes and suffixes:
এখানে ভোকাবিউলারি আর, নতুন শব্দ গঠনের কথা বলা হয়েছে। বাজারের যে কোন ভোকাবিউলারি বইতেই চলবে। অবশ্যই আগের প্রশ্ন প্রথমে সমাধান করবেন। আর যারা সময় নিয়ে ভোকাবিউলারি পড়তে চান, তাঁরা Word Smart (I &II) পড়তে পারেন। এছাড়া ভোকাবিউলারির জন্য আমার তৈরি করা ১২ টা ভিডিও টিউটোরিয়াল Youtube এ আছে, ওগুলো ডাউনলোড করে কয়েকবার শুনতে পারেন। ‘Sujan Debnath’ বা ‘অব্যয় অনিন্দ্য’ লিখে Youtube –এ সার্চ দিলেই পাওয়া যাবে।
PART- II: Literature:
সিলেবাসঃ [ English Literature: Names of writers of literary pieces from Elizabethan period to the 21st Century. Quotations from drama/poetry of different ages। ] মানে লেখকের নাম, বইয়ের নাম আর কোটেশান। সেটা এলিজাবেথান পিরিয়ড থেকে আধুনিক পর্যন্ত। এইটা একটু নতুন সংযোজন। মানে ১৫ নম্বর এখান থেকে আসবে, তাই এটার দিকে নজর দিতেই হবে। আমি চেষ্টা করব, সময় পেলে ইংরেজী সাহিত্যের উপর একটা বড় আর্টিকেল লিখতে। তবে আমি এই বিষয়ে দক্ষ নই। তবুও এখানে দু’এক লাইন করে লিখে দিচ্ছি। যাতে যারা আগে পড়েননি তাঁরা শুরু করতে পারেন। যাতে গাইড থেকে বা অন্য কোথাও পড়লে যেন মনে না হয় – এম্মা, এগুলো কি!
Periods of English Literature:
Elizabethan period (1558–1625): রাণী প্রথম এলিজাবেথ আর রাজা জেমস-১ এর শাসনকালে ট্রাজেডি ভিত্তিক থিয়েটারের যুগ। এই সময়ের বিখ্যাতদের মধ্যে Edmund Spenser, William Shakespeare, Ben Jonson, and Christopher Marlowe এরকম কয়েকজন। এদের কিছু বইয়ের নাম, ২/১টা কোটেশান আর শেক্সপিয়ারের জন্ম-মৃত্যুসহ বিস্তারিত জানতে হবে।
Neo-Classical Period (1660–1798): আঠার শতকের শেষ পর্যন্ত এই যুগ। এর আবার তিনটা ভাগ আছে। এযুগের কয়েকজন বিখ্যাত সাহিত্যিক হলেন John Milton (ওনার Paradise Lost এর কথা আমরা জানি), Alexander Pope, Jonathan Swift, Samuel Johnson (১ম ইংরেজী ডিকশনারি এই জনসনের)।
Romanticism (1798–1837): ১৭৯৮ সালে William Wordsworth এবং Samuel Taylor Coleridge কিছু গীতিকবিতা লিখেন, যেগুলোকে Lyrical Ballads বলে। আমাদের HSC তে এই S. T. Coleridge এর ‘The Ancient Mariner’ ছিল ইংরেজী বইয়ের প্রথম গল্প। আসলে আমাদের জন্য এটা গল্প আকারে দেয়া হয়েছিল। এটা ছিল তাঁর কবিতা ‘The Rime of the Ancient Mariner’- ১৭৯৮ সালে প্রকাশিত। এর বিখ্যাত লাইনগুলো আমরা শুনেছি-
“Water, water, everywhere, // And all the boards did shrink; // Water, water, everywhere, // Nor any drop to drink”
একেবারে রবীন্দ্রনাথ বা তাঁর আগের বিহারীলালের ছন্দের মত, তাই না? এগুলো গীতিকবিতা।
যাই হোক, এটা প্রকাশের সাথেই শুরু হয় ইংরেজী সাহিত্যের রোমান্টিক যুগ। তাহলে রোমান্টিক যুগের বিখ্যাতরা হলেন William Wordsworth, Samuel Taylor Coleridge, William Blake. এরা হলেন রোমান্টিক যুগের ফার্স্ট জেনারেশন। আর সেকেন্ড জেনারেশান রোমান্টিক কবিরা হলেন বায়রন, শেলী, কিটস (Lord Byron, Percy Bysshe Shelley, John Keats). ১৮৩৭ সালে রাণী ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন। এরপর শুরু হয় ভিক্টোরিয়ান যুগ।
Victorian literature (1837–1901): রাণী ভিক্টোরিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ থেকে এই যুগ। এই যুগে উপন্যাস জনপ্রিয় মাধ্যম হয়। এযুগের বিখ্যাতদের মধ্যে Charles Dickens, George Eliot, Robert Browning, Alfred Lord Tennyson ইত্যাদি। ডিকেন্সের কথা আমরা জানি। ফরাসী বিপ্লবের পটভূমিতে প্যারিস আর লন্ডনকে নিয়ে লেখা তাঁর “A Tale of Two Cities” তো বেস্ট সেলিং বই। আর টেনিসন ছিলেন রানী ভিক্টোরিয়ার রাজকবি।
১৯০১ সাল থেকে আধুনিক যুগ। এসময়ের কিছু বইয়ের লেখকের নাম জানতে হবে। টি এইচ এলিয়ট থেকে আজকের চেতন ভগত যে কেউই হতে পারে। কিছু বইয়ের নাম বার বার জোরে জোরে বলবেন, অন্য কাউকে শোনাবেন।
এই যুগবিভাগে বিভিন্ন জায়গার কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। তাই গাইডে বা অন্য কোথাও কিছু অমিল বা উপযুগ বা কোন বিশেষ যুগের সাহিত্যের বিস্তারিত শ্রেণীভাগ থাকতে পারে।
লেখক, সুজন দেবনাথ
সহকারী সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়
২৮ তম বিসিএস(পররাষ্ট্র)



২ মাসে প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি

৩৬ বিসিএস : ২ সপ্তাহে প্রিলি প্রস্তুতি
ফাঁকিবাজদের জন্য প্রিলি প্রস্তুতি
১৮ দিনে খাল পার; I mean প্রিলি পার…

সবাই বলে কি কি পড়তে হবে; আসলে প্রিলি পাশ করতে হলে জানতে হবে কি কি বাদ দিয়ে পড়তে হবে। আমি আজ আলোচনা করবো কি কি বাদ দিয়ে পড়তে হবে !
মূল জোর দিতে হবেঃ
১.  বাংলা সাহিত্য ও গ্রামার
২.  ইংরেজি গ্রামার
৩.  গনিত
৪.  মানসিক দক্ষতা
৫.  কম্পিউটার
৬.  বিজ্ঞান

====== বাংলা======সাহিত্যঃ


প্রাচীন ও মধ্যযুগ, আধুনিক (১৮০০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সাহিত্যিকদের সাহিত্য কর্ম ও ব্যক্তিগত বিষয়াবলী) ছাড়া খুব আধুনিক গুলো চোখ বন্ধ করে বাদ !
প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্যিক ও সাহিত্য নির্দিষ্ট তাই পরিমাণে ছোট এবং নিশ্চিত ভাবেই ৫ নম্বর পাওয়া যায়। আর ১৯৭৫ এর আগেই বাংলা সাহিত্যে মহাপুরুষরা এসে গেছেন, হয়ে গেছে আমাদের ভাষা আন্দোলন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ! তাই ১৯৭৫ এর পরের সাহিত্যিকদের মধ্য থেকে যা আসবে হয়তো এমনি ২-৩ টা পারবো, গেলই না হয় ২-৩ মার্কস… তাঁর জন্য কি জীবন দিয়ে দিতে হবে?
ব্যকরণঃ প্রত্যয় ও সমাস বাদ… ২ মার্কস এর জন্য এতো এতো পড়া লাগবে?

====== ইংরেজি =====

গ্রামারঃ
Synonymy and Antonym, Word Meaning বাদ… গেলোই না হয় ২-৩-৪ মার্কস !! কিন্তু এইগুলার জন্য যে পরিমাণ খাটতে হয়– অন্য জায়গায় এই সময় দিলে ১০ মার্কস পাওয়া সম্ভব ! তাছাড়া ভাগ্য ভালো থাকলে Synonymy and Antonym, Word Meaning থেকে ২-১ টা পেরেও যেতে পারেন !
সাহিত্যঃ

শুধু মেইন মেইন ইংরেজি সাহিত্যিকদের বিখ্যাত কিছু সাহিত্য কর্ম আর তাদের বিখ্যাত উক্তি ছাড়া বাকি সব বাদ… যদি প্রশ্ন সহজ করে তাহলে এই বিখ্যাত সাহিত্যিকদের মধ্য থেকেই আসবে, না হলে সবাই মুড়ি খাবে নিশ্চিত থাকেন ! এই জন্য সবচেয়ে সহজ পন্থা হচ্ছে… ইংরেজি সাহিত্য থেকে বিগত সালে বিসিএস সহ অন্যান্য সরকারী ও বেসরকারি পরীক্ষায় যে প্রশ্ন গুলো এসেছে শুধু সেগুলাই ভালো করে পড়ে ফেলেন। এতো গভীরে যাবার কোন দরকার নাই !

====== কম্পিউটার ====

সবচেয়ে সহজ একটা বিষয়। মন লাগিয়ে ২-৩ বার পড়লে এই বিষয়ে মার্কস না উঠানো কঠিন হয়ে পড়বে আপনার জন্য, কারন আপনি সবই পারবেন ! তাই এই বিষয়ে খুব খুব জোর দিন !! এখানে কিছু বাদ দিবেন না। যদি দিতেই চান তাহলে বিভিন্ন মোবাইল প্রজন্ম এবং বর্তমানে কি ধরনের মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু ইত্যাদি টাইপ বোরিং টপিক বাদ দিতে পারেন। বড় জোর ১ মার্কস কম পাবেন !!

====== গনিত =====

পাটিগণিত চোখ বন্ধ করে বাদ !! কেন বাদ?

পাটিগণিতের সিলেবাসটা একটু স্মরণ করিয়ে দেইঃ বাস্তব সংখ্যা, ল সা গু, গ সা গু, শতকরা, সরল ও যৌগিক মুনাফা, আনুপাত ও সমানুপাত, লাভ ও ক্ষতি… যে কোন গনিতের প্রিলি গাইড নেন, দেখবেন এই পাটিগণিতের সিলেবাস বইয়ের অর্ধেকটা নিয়ে ফেলেছে, অথচ এই সব গুলো টপিকস মিলিয়ে মার্কস কতো জানেন? মাত্র ৩…… !!! এই ৩ মার্কসের জন্য শহীদ হয়ে যাব নাকি ভাই? অথচ পাটিগণিত বাদ দিয়ে যে বিশাল পরিমাণ সময় সেভ হয়, সেই সময়ে গনিতের বাকি সিলেবাসের টপিকস গুলো প্র্যক্তিস করুন বার বার। আর ভাগ্য ভালো থাকলে, পাটিগণিতের ২-১ টা এমনকি খুব ভাগ্য ভালো থাকলে ৩ টাই এমনি পেরে যেতে পারেন !!

আর বিন্যাস, সমাবেশ, সম্ভাব্যতা কঠিন লাগে? এগুলা আসলে অনেক সহজ… আপনি সাইন্স এর বিশেষ করে ইন্টার যাদের সাইন্স ছিল তাদের কাছে ৩-৪ ঘণ্টা সময় নিয়ে ব্যাপারটা বুঝে ফেলুন ! দেখবেন পানি পানি লাগছে !

==== মানসিক দক্ষতা ====

ভাষাগত যৌক্তিক বিচার এবং বানান ও ভাষা এই দুইটা টপিকস আপনি বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণ পড়ার সময় যতটুকু পড়ে ফেলবেন সেটাই যথেষ্ট, এর জন্য বেশি সময় দেয়া প্রয়োজন নাই !! বাকি গুলাও গনিত করার সময় মোটামুটি পড়ে ফেলা হয়ে যায় ! মানসিক দক্ষতা কিছুটা কমন সেন্স আর কিছুটা প্র্যাকটিস এর সমন্বয়ে ভালো করা যায় !
বাজার থেকে শুধু মানসিক দক্ষতার উপর একটা বই কিনে প্রতিদিন ১ ঘণ্টা প্র্যাকটিস করুন ! আশা করি ১৫ এর মধ্যে ১২-১৩ টা পেয়ে যাবেন, ১০ টা হলেও কিন্তু মন্দ না !

===== বিজ্ঞান =====

বিজ্ঞানে তিনটা পার্ট। প্রতি পার্টে ৫ নম্বর করে মোট ১৫ মার্কস। এর মধ্যে ‘ভৌত বিজ্ঞান’ পার্টটা সবচেয়ে বড় ! পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞানের সমন্বয়ে গড়া এই পার্টে মাত্র ৫ মার্কস… অথচ বিশাল সিলেবাস। আমরা যেহেতু ফাঁকিবাজ… তাই এই পার্ট আমরা পড়বো না ! আর যদি খুব পড়তে মন চায়, তাহলে শুধু বিগত সালের বিভিন্ন সরকারী চাকরী পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন গুলোই পড়বো… গভীরে যাব না !

বাকি দুইটি পার্টঃ ‘জীব বিজ্ঞান’ ও ‘আধুনিক বিজ্ঞান’ তুলনামূলক ছোট এবং সহজ ! এই দুই পার্টে একটু সময় দেন !

===== বাংলাদেশ বিষয়াবলী ====

ইংরেজি শাসন আমল থেকে মুক্তিযুদ্ধ পড়বো, বাকি গুলা বাদ !
অর্থনৈতিক সমীক্ষার মূল মূল তথ্য গুলো পড়বো ! গভীরে যাবার দরকার নাই।
বাংলাদেশের সংবিধান পড়তেই হবে ! তবে বেছে বেছে… সব নয় ! বিশেষ করে ১-৪৭ ধারা, ৬৪, ৬৬, ৭৭, ৯৩, ৯৪, ১১৭, ১১৮,১১৯, ১২৭, ১৩৭, সংশোধনী– ১ম থেকে ৫ম, ৮ম, ১৫তম, ১৬ তম !!
আর জুন মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাম্প্রতিক তথ্য গুলো !
অবশ্যই অবশ্যই মোদীর ঢাকা সফর, ছিট মহল, BBIN, পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ইত্যাদি সরকারের উন্নয়ন কাজের উল্লেখযোগ্য টপিকস গুলো পড়বেন !

===== আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী ====

জুন মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাম্প্রতিক তথ্য গুলো খুব খুব গুরুত্ব দিয়ে পড়বো !
আর ‘আন্তর্জাতিক পরিবেশগত ইস্যু ও কূটনীতি’ এবং ‘আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানাদি’ ছাড়া বাকি সব বাদ…

==== ভূগোল ও পরিবেশ ====

সামাদ ভাই একটা PDF করেছেন এই বিষয়ের উপর ! ওইটাই উল্টে পাল্টে ৩ বার পড়েন ! আর কিছু লাগবে না !

==== নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন ====

এই টপিক এ যত পারেন কম উত্তর করবেন ! উত্তর গুলো কেমন যেন থাকে ! তাই ভুল করার চান্স থাকে… কমন সেন্স থেকে 4-5 টা এমনি পারবেন, তবুও চাইলে বিগত বছরে আসা প্রশ্ন গুলো চোখ বুলাতে পারেন ! তবে যারা একটু আঁতেল, তাঁরা চাইলে প্রফেসর মোজাম্মেল হক এর জুন মাসে আসা নতুন বই ‘পৌরনিতি ও সুশাসন’ প্রথম পত্র বইটার ১ম ও ২য় অধ্যায় দেখতে পারেন !
———————————————————————————————–
২০০ মার্কের প্রিলি, আপনি চাইলেও ১৪০ টার বেশি পারবেন না !! আর কাট মার্কস এবার ১০০- ১১০ এর কম থাকবে… তাই দুনিয়া পড়ে লাভ নাই ! টার্গেট রাখেন ১১০… তাই আপনি কোন কোন বিষয় বেশি পারেন সেটা ঠিক করে আর নম্বর বণ্টন দেখে একটা প্ল্যান তৈরি করে মাঠে নেমে পড়ুন !!
ঘড়ি কিন্তু চলছে… টিক টিক টিক…

Thursday, November 26, 2015

Best Viva Tips- যে ১৫ টি উপায়ে ভাইভা করে ফেলবেন পানির মত সহজ

 লিখিত পরীক্ষা এলে আমরা যে রকম কোমর বেঁধে প্রস্ত্ততি নেই, কত কী করি, ভাইভার জন্যে অতটা করি না। আসলে মৌখিক পরীক্ষা ও লিখিত পরীক্ষার ধরন ভিন্ন, টেকনিক ভিন্ন, ভালো করার কলা-কৌশলও ভিন্ন। এবং দুটো পরীক্ষাই গুরুত্বপূর্ণ। আর একজন সফল ছাত্র লিখিত পরীক্ষাকে যেমন গুরুত্ব দেন, তেমনি মৌখিক পরীক্ষাকেও গুরুত্ব দেন। দুটো পরীক্ষা ভালো দেয়ার মধ্য দিয়ে ভালো রেজাল্ট করেন।
 মৌখিক পরীক্ষা বা ভাইভাকে বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীই ভয় পায়। এজন্যে অনেক সময় প্রস্ত্ততি থাকলেও পারফরমেন্স খারাপ হয়। অনেকের থিউরি পরীক্ষা ভালো হয়, কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করতে পারে না। দেখা যায় মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে বের হচ্ছে কাঁদতে কাঁদতে। আবার কারো কারো কাছে মৌখিক পরীক্ষা কোনো পরীক্ষাই না! একটা ড্যামকেয়ার ভাব থাকে তাদের মধ্যে। খুব ভয় পাওয়া আর ড্যামকেয়ার ভাব থাকা-দুটোর কোনোটাই সঠিক নয়। তাই মৌখিক পরীক্ষার ব্যাপারে সবার দৃষ্টিভঙ্গিটা গুছিয়ে নেয়ার জন্যে তিনি বলেন, লিখিত পরীক্ষা যেমন ভাঁপা পিঠা খাওয়ার মতো আনন্দের, তেমনি মৌখিক পরীক্ষাও আমাদের জীবনে পুলি পিঠা খাওয়ার মতো আনন্দদায়ক ঘটনা।
মৌখিক পরীক্ষা মানেটা কী?
মৌখিক পরীক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Vivavoce’ যার adjective form হচ্ছে Vivacious’. এর অর্থই হচ্ছে প্রাণবন্ত, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হওয়া বা উপস্থাপন করা। সুতরাং এ পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব উপস্থিত বুদ্ধি রুচি জ্ঞান ভদ্রতাবোধ পোশাক পরিচ্ছন্নতা স্মার্টনেস কথা বলার ভঙ্গি আচার-আচরণ-এ সবকিছু যাচাই করা হয়।
ভাইভা বোর্ডে পাঠ্য বই থেকে যতটা না জিজ্ঞেস করা হয়, তারচেয়ে বেশি খেয়াল করা হয় বাকি বিষয়গুলো। এজন্যে প্রস্ত্তত থাকতে হবে সব দিক থেকে।
মৌখিক পরীক্ষার জন্যে এই প্রস্ত্ততিকে ভাগ করা যেতে পারে দুটি ভাগে-
1. পড়ালেখার প্রস্ত্ততি
2. অন্যান্য প্রস্ত্ততি
এই অন্যান্য প্রস্ত্ততিরও কয়েকটি ধাপ আছে। প্রথমেই আসবে পড়ালেখার প্রস্ত্ততি।
1. মৌখিক পরীক্ষার জন্যে পড়ালেখার প্রস্তুতি
সাধারণত মৌখিক পরীক্ষার আগে থিউরি পরীক্ষা হয়ে যাওয়ায় আলাদা করে মৌখিক পরীক্ষার জন্য পড়তে বসতে হয় না। তাছাড়া মৌখিক পরীক্ষার আগের ২/৩ দিন সময়ে সব বিষয় পড়াও সম্ভব নয়।
ভাইভাতে প্রত্যেক বিষয় বা কোর্স সম্পর্কে conceptual প্রশ্ন করা হয়। তাই Conceptual বিষয়গুলো রিভাইজ করা এবং মেডিটেটিভ লেভেলে প্রত্যেকটা কোর্সের Conceptual বিষয়গুলো ভিজুয়ালাইজ করা।
ভাইভাতে যে প্রশ্নগুলো করা হয়, তা হলো কোনো থিউরির এপ্লিকেশন কী ধরনের। যেমন, নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সূত্রের প্রয়োগ। যখন ছাত্রছাত্রীরা conceptual বিষয়বস্ত্ত পারে না, তখন সংজ্ঞা, পার্থক্য এসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়।
তবে ভালো প্রস্ত্ততির জন্যে আরো কয়েকটি পয়েন্ট আছে-
• যদি প্রতি বছরের শেষে ভাইভা হয়, তাহলে সে বছরের কোর্সগুলো রিভাইজ করা।
• চার বছর পরে অনার্স বা বিবিএ-র শেষে যে ভাইভা হয়, তখন চার বছরের গুরুত্বপূর্ণ কোর্সগুলোর কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ রিভাইজ করা।
• আগে থেকে খোঁজ নিয়ে জানার চেষ্টা করা যে, ভাইভা বোর্ডে কারা কারা চেয়ার করবেন, তখন যে বিষয়ের বিশেষজ্ঞ, সেগুলো নিয়ে একটু পড়াশোনা করে যাওয়া। অথবা সেই স্যার বা ম্যাডাম যদি এর আগে কোনো কোর্স পড়িয়ে থাকেন তাহলে সে কোর্সগুলো নিয়ে ভালোভাবে পড়ে যাওয়া।
2. মৌখিক পরীক্ষার জন্যে অন্যান্য প্রস্ত্ততি
ক)শারীরিক-মানসিকভাবে ফিট থাকুন
ভাইভাতে কেঁদে ফেললে, অসুস্থ হলে কিংবা অসুস্থতার ভান করলে শিক্ষকরা বিরক্ত হয়ে থাকেন। অনেক ছাত্রছাত্রী ভাইভাতে ঢুকে বলে তার মাথা ঘুরছে, কিছু পারে না, বমি আসছে, অসুস্থ ছিলো। এগুলো বলে আসলে খুব লাভ হয় না। পরীক্ষক কখনোই একজন পরীক্ষার্থীর ওপর সহানুভীতিশীল হন না এসব ক্ষেত্রে। তখন শিক্ষকরা তাকে একটা পাশ মার্কস দিয়ে বিদায় করে দেন।
শারীরিক-মানসিকভাবে ফিট থাকার জন্যে সেই মুহূর্তে কোনো আনন্দের স্মৃতিকে মনে করা যেতে পারে বা কয়েকবার আনন্দ-আনন্দ-আনন্দ বলা যেতে পারে। আর অটোসাজেশন দেয়া-সুস্থ দেহ, প্রশান্ত মন, কর্মব্যস্ত সুখী জীবন তো আমরা দিতেই পারি।
খ)ইতিবাচক হোন
মৌখিক পরীক্ষার ব্যাপারে অবশ্যই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে হবে। কারণ আমরা জানি যে, বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের চিন্তার প্রতিফলন। তাই ‘আমি মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করতে পারবো’-এই দৃষ্টিভঙ্গি একজন পরীক্ষার্থীকে ভাইভার পুরো সময়ে প্রশান্ত থাকতে এবং ভালো করতে সাহায্য করবে।
গ)ভাইভা বোর্ডের পরীক্ষকদের মৌটিভ বুঝতে চেষ্টা করুন
পরীক্ষক যারা আছেন তারা কী জানতে চাইছেন এটা বুঝতে হবে। এজন্যে অফিস সহকারী বা কোনো সোর্স থেকে আগেই খোঁজ নিতে হবে যে, কারা কারা থাকতে পারেন। কারণ, মৌখিক পরীক্ষার ধরন পরীক্ষকের মন-মেজাজ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও মর্জির ওপর নির্ভরশীল। কেউ কিছুটা রাগী হতে পারেন, আবার কেউ নরম। এখন আপনাকে সেই সময়টুকুতে এই ব্যক্তিদের মন জয় করতে হবে। আর মন জয় করার সহজ উপায় হচ্ছে পরীক্ষককে নিজের সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করা। তাই কমান্ড সেন্টারে তাদেরকে নিয়ে এসে কথা বলুন, নিজের জন্যে এবং তাদের জন্যেও দোয়া করুন।
ঘ)কিছু কিছু বিষয় নীতিগতভাবে অনুসরণে সচেষ্ট থাকুন
• তার মধ্যে প্রথমেই আসে ড্রেস-আপ মানে পোশাক-আশাক। বলাই হয়, আগে দর্শনধারী, তারপরে গুণবিচারী। শালীন পোশাক পরিধান করা উচিত। ছেলে হোক কিংবা মেয়ে-সবার জন্যেই এটা সমানভাবে প্রযোজ্য।
মেয়ে হলে সালোয়ার-কামিজ (মিডিয়াম সাইজের, ফুল স্লিভ, বড় ওড়না পিন-আপ করা। হাই হিল না পড়ে মিডিয়াম বা ফ্ল্যাট পরা। শব্দ হয় এমন জুতো না পরা।) কেউ চাইলে শাড়ি পরেও যেতে পারেন। মেক-আপটা যেন চোখে না পড়ে।
ছেলে হলে ফরমাল ড্রেস। ফুল স্লিভ শার্ট, প্যান্ট (অবশ্য জিন্সের নয়), শার্ট ইন করে পরা, টাই থাকলে ভালো। শীতকাল হলে সুট-কোট পরা যাবে, তবে গ্রীষ্মকালে অবশ্যই নয়। আর সহপাঠীর জামা না পরা। আসলে আপনার যা আছে, তা নিয়েই আপনাকে বাস্তবতা ফেস করা উচিত, ধার করা কিছু দিয়ে ফুটানি করা ঠিক নয়।
• শিক্ষককে তোষামোদ করা যাবে না। শিক্ষকের পড়ানো ছাত্রছাত্রীর যতই ভালো লাগুক ভাইভা বোর্ডে সেটা শিক্ষককে বলা যাবে না।
• অতিরিক্ত স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। অনেক সময় ছাত্রছাত্রীরা ভাইভার রুমে ঢুকেই গুড মর্নিং বা গুড আফটারনুন এসব বলে স্মার্টনেস দেখাতে শুরু করে। এটা না করে ভদ্রভাবে সালাম দেয়া উচিত। স্লামাইকুম নয়, আসসালামু আলাইকুম বলে।
মৌখিক পরীক্ষার আরো কিছু জরুরি প্রসঙ্গ-
মৌখিক পরীক্ষায় প্রশ্নের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর সাহস, আত্মবিশ্বাস বা তাৎক্ষণিক বুদ্ধি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে চান শিক্ষকরা। বুদ্ধিমত্তা ও প্রতুৎপন্নমতিত্ব থাকলে এই পরীক্ষায় ভালো করা যাবে।
1. উত্তর দেওয়ার সময় এমন কোনো বিষয়ভিত্তিক শব্দ বা টার্ম ব্যবহার করা উচিত নয়, যার সম্পর্কে পরীক্ষার্থীর সঠিক ধারণা নাই। কেননা ভাইভা বোর্ড এর সদস্যগণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করে তাদেরকে আটকানোর চেষ্টা করে থাকেন। এমনভাবে উত্তর দিতে হবে যেন আপনার কথার সূত্র ধরে টিচার পরের প্রশ্নটি করেন।
2. বুঝতে বা শুনতে অসুবিধা হলে ‘হুঁ’ বা ‘অ্যাঁ’ জাতীয় শব্দ না করে বলা-‘জ্বী’ বা ‘দয়া করে আবার বলুন’। ইংরেজিতে বললে ‘সরি’ বলা।
3. মৌখিক পরীক্ষার সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব না-ও হতে পারে। এটা বাস্তবতা। তাই মন খারাপ না করা।
4. কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে সেটা সঙ্গে সঙ্গে বিনীতভাবে স্বীকার করে নেয়া। না-জানা বা মনে পড়ছে না-এ রকম প্রশ্নের উত্তর আন্দাজে বলা ঠিক নয়। উত্তর জানা না থাকলে বিনয়ের সাথে বলা, ‘আমি জানি না বা আমি বলতে পারছি না, সরি।’ তখন হয়তো শিক্ষকরা অন্য প্রশ্ন করবেন।
5. প্রশ্নকর্তা ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে উত্তর ইংরেজিতে দেয়ার চেষ্টা করা। আবার তিনি যখন বাংলায় প্রশ্ন করবেন তখন বাংলায়-ই উত্তর দেয়া।
6. দেশীয় রাজনীতির প্রসঙ্গ এলে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করতে হবে। কোনো দলকে সমর্থন করা ঠিক হবে না।
7. অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নে বিব্রতবোধ না করা। যেমন-একবার ভাইভাতে শিক্ষক বললেন যে, তোমার মোবাইল নম্বর লিখ। ছেলেটি মোবাইল নম্বর লেখার পর শিক্ষক তখন বললেন যে, এখান থেকে গাণিতিক গড় এবং জ্যামিতিক গড় বের কর। এ ধরনের প্রশ্ন তো কোথাও লেখা থাকে না। তাই এসব ক্ষেত্রে না ঘাবড়ে গিয়ে ঠান্ডা মাথায় যতটা পারা যায়, ততটা করার চেষ্টা থাকা উচিত।
ভাইভা ভালো না হওয়ার কারণ-
• কোনো প্রস্ত্ততিও না নেয়া
একবার একটি ছেলে ভাইভা পরীক্ষা দিতে আসছে না। পরে তাকে বিভাগীয় শিক্ষক ফোন করলেন। যা জানলেন তা হলো-লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ছেলেটি খুশিতে ১০ জন বন্ধু-বান্ধবসহ রাস্তার পাশে কোনো এক জায়গা থেকে খিচুড়ি খেয়েছে। তারপর রাত থেকে তার পেট খারাপ এবং সে ১৬ বার টয়লেট করেছে। এরপর তাকে ধরে ধরে বন্ধুরা ভাইভা পরীক্ষার জায়গায় নিয়ে আসে। আসলে ছেলেটির কাছে ভাইভার চেয়ে খিচুড়ি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
• লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর অন্যান্য কাজে জড়িয়ে যাওয়া
ভাইভাতে একটি ছেলে একেবারেই কিছু পারছিলো না। তাকে অপশন দেয়া হলো যে সে যেটা পারবে, সেখান থেকেই প্রশ্ন করা হবে। সে অপশনও দিতে পারছে না। পরে তাকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, সে কেন ভাইভাতে কিছু পারছে না। তখন সে বললো যে লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে সে মিটিং-মিছিল নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, রাতে ঘুমায় না তিন দিন। তাই এখন আর তার মাথা কাজ করছে না।
• আবার কেউ কেউ ভাইভা দিয়ে কতক্ষণে বন্ধু, আড্ডা, গানে মেতে উঠবে সেই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
ভাইভাতে ভালো না করতে পারার কারণ ব্যাখ্যা করে মুরশীদা খানম তার আলোচনা শেষ করেন।
 মৌখিক পরীক্ষায় একজন প্রার্থীর যদি প্রশ্নের সঠিক ও সাজানো গুছানো উত্তর দিতে পারেন তাহলে পরীক্ষকের মনে প্রার্থী সম্পর্কে আস্থার ভাব চলে আসে। সেইসাথে মার্জিত আচরণ যদি থাকে তাহলে সোনায় সোহাগা। আসলে প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়াটাই বড় কথা নয়; বরং বোর্ডকে সন্তুষ্ট করতে পারাই আসল কথা।
মৌখিক পরীক্ষায় একজন পরীক্ষক যা দেখেন তা হচ্ছে একজন পরীক্ষার্থী-
- কতটা বিনয়ী?
- কতটা আত্মবিশ্বাসী? এবং
- কতটা পরিস্থিতিকে সামলে নিতে পারছে?
মৌখিক পরীক্ষায় ভাইভা বোর্ডকে সন্তুষ্ট করার উপায়-
▪ লিখিত পরীক্ষায় কোনো দর্শক থাকে না। দুই/ চার জন গার্ড দেন। কিন্তু ভাইভা বোর্ডে মিনিমাম ২ জন থাকেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চার জন থাকেন, তারা পাঁচ/১০ মিনিট ভেতরে যিনি পরীক্ষা দেন পুরোটা সময় তার প্রতি দৃষ্টি, মনোযোগ দেন, তাকিয়ে থাকেন। নার্ভাস করে দেয়ার জন্যে তাদের এই স্থির দৃষ্টিই যথেষ্ট।
তবে নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। শুধু ভাইভা রুমকে নিজের বাসা মনে করুন। ভাইভা বোর্ডকে মনে করেন নিজের ফ্যামিলি মিটিং। স্যারকে বাবা বা বড় ভাই, ম্যাডামকে মা বা বড় বোন মনে করেন।
▪ সেইসাথে অন্তত সাত দিন আগে থেকে  অবলোকন করতে পারেন এভাবে যে, ভাইভা পরীক্ষার দিন আপনি দরজা আলতো করে খুলে সালাম দিচ্ছেন, বসতে বললে বসছেন। এক এক করে সবার দিকে তাকাচ্ছেন (অপলক দৃষ্টিতে নয়)। টিচাররা যা জিজ্ঞেস করছেন তা এমনভাবে উত্তর দিচ্ছেন যে আপনার উত্তরের সূত্র ধরে পরের প্রশ্ন করছেন যেটি আপনার জানা।
▪ মৌখিক পরীক্ষায় যেহেতু মুখের কাজ, মানে কথার কাজ। এজন্যে সবসময় কথাশিল্পকে চর্চা করতে হবে। এটা একদিনে হবে না। একবার ভাইভাতে একটি ছেলে কিছুই পারছিলো না। তাকে ভাইভা বোর্ডের শিক্ষকরা বললেন যে, তুমি কী কী পড়ে এসেছ। সে উত্তর করেছিলো, ‘স্যার আমি পইড়া আইতে পারি নাই।’ কয়জন টিচার এটা মেনে নেবেন? তাই সাবধান হতে হবে।
1. স্মার্টলি সোজা হয়ে ঢুকতে হবে।
2. ঢোকার সময় কী বলতে হবে-আমি কি ভিতরে আসতে পারি/ May I come in Sir/ Madam?
3. বসতে বললে-মেরুদন্ড সোজা করে বসা, হাত কোলের উপর রাখা, পা নাড়ানো, নখ কামড়ানো এগুলো করা যাবে না।
4. কথা বলার সময় হাতের মুভমেন্ট দৃষ্টিকটু কিছু করা যাবে না।
5. শুধু কলম ও প্রবেশপত্র সাথে নিয়ে প্রবেশ করা।
6. ভাইভা শেষে উঠে যাওয়ার সময় সালাম দিয়ে বিনয়ের সাথে বিদায় নিতে উঠে যাওয়া।
কয়েকটি অনুশীলনী-

1. পরীক্ষার কমপক্ষে সাত দিন আগে থেকে অটোসাজেশন চর্চা শুরু করা।
2. কথা বলায় জড়তা দূর করার জন্যে বেশি বেশি স্বরায়ন অনুশীলন করা।
3. প্রার্থনা করা। নিয়মিত মূসা (আ)-এর প্রার্থনাটি করা যেতে পারে-আমার কণ্ঠের জড়তা দূর করে দাও যেন সবাই আমার কথা বুঝতে পারে।
7. নার্ভাসনেস দূর করার জন্যে পরীক্ষা দিতে যাবার আগে শিথিলায়ন মেডিটেশন করলে ভালো।
8. ভাইভা দিতে প্রবেশ করার পূর্বে  আল্লাহকে মনে  করা।

 ভাইভা পরীক্ষার জন্যেও প্রস্ত্ততি নিতে হবে। কেননা ভাইভা বোর্ডে স্যার বা ম্যাডাম আমাদের জন্যেই অপেক্ষা করছেন। অর্থাৎ আমরা তাদের কাছে প্রত্যাশিত। 

Wednesday, November 18, 2015

পাবলিক ভার্সিটি তোমাকে জাস্ট একটা সার্টিফিকেট দেবে, আর কিছুই না!

যারা ‘কোথাও’ চান্স পাওনি
যারা জিততে পারনি, তাদেরকে বলছি : জিততে পারনি, ভাল কথা। কিন্তু তাই বলে হেরেও যেও না।
আচ্ছা, জেতা কাকে বলে?
আমি যখন চুয়েটে চান্স পেলাম, তখন টপ সাবজেক্ট ছিল কম্পিউটার সায়েন্স। ‘টপ সাবজেক্ট’ মানে, সেই সময়টাতে চলছিল সিএসই’র ক্রেজ। মানে, সিএসই’তে পড়াশোনা করলে ভাল চাকরি পাওয়া যাবে, সবাই এটা ভাবছিল। আমি অ্যাডমিশন টেস্টে ২য় হয়েছিলাম, মানে যারা চুয়েটে চান্স পায়নি, তাদের চোখে (হয়তোবা) ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার দৌড়ে আমি যোগ্যতমদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে। আরও সহজ করে যদি সরলীকরণ করি, আমার হওয়ার কথা ছিল ২য় সেরা ইঞ্জিনিয়ার! এইতো? নাকি?
কিন্তু দেখ, আমি আজকে কী করছি। কেন করছি? আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাইনি। আমি চেয়েছিলাম, সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করতে। জানো তো, যারা ভার্সিটিতে সাহিত্য নিয়ে পড়ে, ওদেরকে সবাই ভাবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। আর বাবা-মা’রা চান না, উনাদের সন্তান দ্বিতীয় নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠুক। কেন উনারা ওরকম করে ভাবেন? এখনও অনেকে এই ধারণা নিয়ে বসে থাকেন, সাহিত্যে পড়লে পাস করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারি করা ছাড়া আর কী-ই বা করবে? আর মাস্টাররা তো গরীব, তাই ওরকম মাস্টার হয়ে কী হবে? তার মানে দাঁড়াল এই, আমাদের বাবা-মা’রা আমাদেরকে ‘কিছু একটা’ হিসেবে দেখতে চান। কথা হল, ওই ‘কিছু একটা’ আসলে কী? ওটা হল, আর্থিক সচ্ছলতা আর সামাজিকভাবে স্বীকৃত একটা অবস্থান। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যতটা না পড়াশোনা করতে যাই, তার চাইতে ঢের বেশি যাই পাস করার পর একটা ভাল বেতনের চাকরি জোটাতে। আজকের দিনে Learning= L(Earning)= Love Earning!
মানে, পড়াশোনার উদ্দেশ্য, জ্ঞানার্জন নয়, সম্মানজনকভাবে অর্থোপার্জন। এখন আসি, যারা যেখানে চান্স পেতে চাইছিলে, সেখানে পাওনি, তাদের ক্ষেত্রে এই উদ্দেশ্যটা কতটা সফল হবে? কিছুটা আত্মকথনের মধ্য দিয়ে আমি এর উত্তরটা দেয়ার চেষ্টা করছি।
আমি যখন ইন্টারে চট্টগ্রাম কলেজে পড়তাম, তখন সহজসরল বোকাসোকা পড়ুয়া স্টুডেন্ট হিসেবে আমার সুনাম ছিল। আচ্ছা, পড়ুয়া…… তো, কী পড়তাম? যা পড়তে ভাল লাগত। কী পড়তে ভাল লাগত? অবশ্যই ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি-ম্যাথস এসব নয়। এর আগে স্কুলে পড়ার সময় শুনতাম, যারা ভাল স্টুডেন্ট তাদের ম্যাথস ভাললাগা উচিত। মজার না? আমরা এমন একটা সমাজে বড় হই, যেখানে কী ভাললাগা উচিত, এটাও ঠিক করে দেয়া হয়। 3 Idiots মুভির মতো জন্মের পরপরই ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার সিল মেরে দেয়া হয়! ‘ভাললাগা উচিত’ বলে কিছু থাকাই তো উচিত নয়, তাই না? এই যেমন ধর, ‘রবীন্দ্রনাথকে ভাললাগা উচিত’ বলে কিছু নেই; এমনকি রবীন্দ্রনাথকে ভাললাগানোটা যদি ফ্যাশনও হয়, তবুও। সবাইকেই একইভাবে বাঁচতে হবে কেন? যাই হোক, সবার চাপে বল, ফ্যাশনে বল, কিংবা নিজের ইচ্ছাতেই বল, ইন্টারে ওঠার আগেই ম্যাথসকে ভাল লাগিয়ে ফেললাম। পড়ার বইয়ের বাইরের বইটই পড়ার অভ্যেস আগে থেকেই ছিল। ইন্টারে ওঠার পর যখন এটা অনুভব করতে পারছিলাম, আমার সাহিত্য পড়তে ভাল লাগে, ‘ভাল লাগে’ মানে, আসলেই ভাল লাগে, আমি ভাল লাগাইনি, তখন ভাবলাম, সবাই যেভাবে করে সায়েন্স ফিকশন পড়ে এবং ‘ভাল লাগায়’, আমারও তো সায়েন্সের স্টুডেন্ট হিসেবে ওরকম কিছু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ভাললাগানো উচিত, কিংবা কিছু বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ। আমি এর আগে সায়েন্স ফিকশন অতো পড়িনি, বেছে বেছে শুধু ননসায়েন্স ক্লাসিক টেক্সটগুলি পড়তাম। শুরু করলাম পড়া। জোর করে হলেও ভাললাগাতে চাইলাম। কিন্তু দেখলাম, আমার মাথায় যতটা না সায়েন্সের কল্পনা খেলা করে, তার চাইতে বেশি খেলা করে ননসায়েন্সের কল্পনা। Science was a wrong journey for me. কারোর সাথে শেয়ার করলাম না। এর কয়েক বছর আগে এটা নিয়ে একটা বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছিল। যখন সিক্স কী সেভেনে পড়ি, তখন আমি লুকিয়ে লুকিয়ে কবিতা লিখতাম। দুটো কবিতার খাতাও ছিল আমার। একদিন মায়ের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ার পর মা অনেক বুঝিয়েশুনিয়ে এই বলে আমার ব্রেইনওয়াশ করে দিলেন যে, পড়াশোনা করার সময়ে কবিতা লেখা খারাপ। সেই কথা মনে করে আমার কল্পনার রাজ্য আমার মধ্যেই লুকিয়ে রাখলাম। জীবনে এই কল্পনার গুরুত্ব অসীম। ভালকিছু পেতে চাইলে কল্পনা করা প্র্যাকটিস করতে হয়।
ইন্টারে পড়ার সময়ে সাহিত্য আর ভাষার গাঁথুনির প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল হয়ে পড়লাম। সারাদিনই সাহিত্য নিয়ে পড়ে থাকতাম। আমাদের সময়ে সৃজনশীল পদ্ধতি ছিল না, আমাদেরকে ইংরেজি আর বাংলা গদ্যপদ্য পড়তে হত, বড় বড় প্রশ্নের উত্তর লিখতে হত। আমি নিজেই এটা অনুভব করতে পারতাম, অন্যরা যেখানে একটা ছোটগল্প পড়তেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, সেখানে আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা টানা পড়ে একটা উপন্যাস শেষ করে ফেলতে পারি। ইংরেজি আর বাংলা বইয়ের সিলেবাসের আর সিলেবাসের বাইরের সব টেক্সটই পড়ে ফেললাম। একটা ইংরেজি কবিতা পড়ার সময় অন্যদের যেসময়ে ডিকশনারি দেখতে দেখতেই সময় চলে যায়, আমি ওইসময়ে ভেবে ফেলতে পারি, আসলে এখানে লেখক কোন কথাটি বোঝাতে চেয়েছেন, যা তিনি লেখেননি (Parallel meaning)। সারাদিন ইংরেজি আর বাংলা নিয়ে থাকতে থাকতে শব্দের খেলাকে ভালবেসে ফেললাম। আমি জানতাম না যে ডিকশনারি মুখস্থ করা সম্ভব নয়, তাই একদিন বোকার মতন সিদ্ধান্ত নিলাম, ডিকশনারি মুখস্থ করে ফেলব। বঙ্গীয় শব্দকোষ, সাহিত্য সংসদের ইংলিশ-বেঙ্গলি ডিকশনারি, যথাশব্দ, আর চেম্বার্স ডিকশনারি অব সিনোনিমস্ অ্যান্ড অ্যান্টোনিমস্ মুখস্থ করা শুরু করে দিলাম। ডিকশনারি পড়ে পড়ে শেষের বইটিতে যে শব্দটি দেখতাম, নেই, সেটি পেন্সিল দিয়ে লিখে অ্যাড করে দিতাম। চলন্তিকা, সাহিত্য সংসদ আর বাংলা একাডেমীর বাংলা আর ইংরেজি ডিকশনারি, পেঙ্গুইনের বিভিন্ন ধরণের ডিকশনারি সহ কয়েকশ ভাষাসংক্রান্ত বইপত্র কিনে ফেললাম। এসব কিন্তু কাউকেই বলতাম না। ইন্টারে পড়ুয়া একটা ছেলে ওর স্বপ্ন নিয়ে হাসাহাসি সহ্য করতে পারে না। এভাবে করে আমার এক্সগার্লফ্রেন্ড ম্যাথস ছ্যাঁকা খেল নিউ গার্লফ্রেন্ড লিটারেচারের কাছে।
বাংলা কিংবা ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স করছে, এরকম কিছু ভাইয়া আর আপুর কাছ থেকে জেনে নিতে আরম্ভ করলাম, ওদেরকে ভার্সিটিতে কী কী পড়তে হয়। উনারা শুরুতে আমাকে পাত্তা দিতে চাইতেন না, কিন্তু আমি এটা নিয়ে কনফিডেন্ট ছিলাম যে, ভাষা নিয়ে আমার জানাশোনা আমাকে অবজ্ঞা করার মতো নয়। আস্তে আস্তে অনার্সের সাহিত্যের বইপত্র পড়তে শুরু করে দিলাম। চট্টগ্রামের পাবলিক লাইব্রেরিতে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকতাম। (ক্লাস ফাঁকি দেয়ার কারণে ইন্টারে ডিসকলেজিয়েট হয়েছিলাম।) এসব কেউ জানত না। জানলে হয়তো আমাকে বুঝিয়ে বলতো, ওই পাগলামিটা কেন নিরর্থক। আর আমিও হয়তোবা আমার প্যাশন থেকে সরে আসতাম। যে মানুষ তার প্যাশন নিয়ে থাকতে পারে না, সে এমনকিছু করতে পারে না, যেটাকে আলাদা করে চোখে পড়ে।
একজনের কথা এই মুহূর্তে খুব মনে পড়ছে। আমার এক দাদা ইংরেজিতে অনার্স পড়তেন। উনার সাথে খুব গল্প করতাম। উনি আমাকে ডিকশনারি থেকে ইংরেজি শব্দ ধরতেন। (এই খেলাটা অবশ্য আমরা কয়েকজন কলেজফ্রেন্ড মিলেও খেলতাম।) উনার চাইতে গ্রামার আর ভোকাবুলারি বেশি পারতাম বলে উনি আমাকে একইসাথে ঈর্ষা এবং স্নেহ করতেন। মনে আছে, একদিন উনি খুব রাগ করে বলেছিলেন, “তোমার সমস্যাটা কী, বাপ্পি? তোমাকে ফাউলারের ‘মডার্ন ইংলিশ ইউসেজ’ পড়ার বুদ্ধি কে দিয়েছে?” আমি উত্তর দিয়েছিলাম, “কেন দাদা, পড়লে কী হয়?” “রেজাল্ট খারাপ হবে, বাসায় বকবে।” “ওটা এখনও হচ্ছে না বলেই তো আমাকে বাসায় কিছু বলে না।” উনি আর কিছুই বলেননি সেদিন। আর কিছু বললে হয়তো আমি আর কোনদিনও উনার কাছে যেতাম না। সেসময় আমার কাছে মনে হত, ডক্টর এস সেন কিংবা রামজি লাল উনারা অনেক পণ্ডিত মানুষ। এই দুইজনের গাইডবই ইংরেজি অনার্সের ক্লাসে পড়ানো হত। সরাসরি অরিজিনাল টেক্সট পড়ার মতো বিদ্যে মাথায় ছিল না বলে আমি উনাদের লেখা গাইড বইয়ের মাধ্যমে বেশকিছু ক্লাসিক টেক্সট পড়ে ফেলেছিলাম। আমি কিন্তু ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি-ম্যাথসেরও অনেক ওয়ার্ল্ডফেমাস বই কিনেছিলাম। (এই মুহূর্তে মনে পড়ছে, মাক্স বর্নের অ্যাটমিক ফিজিক্স, গ্লাস্টনের ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি, আই এল ফাইনারের অর্গানিক কেমিস্ট্রি, জি এইচ হারডির অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু দ্য থিওরি অব নাম্বারস সহ আরও অন্তত একশো প্রামাণ্য বই। এমনকি ইকোনমিক্সেরও ১০-১২টি প্রামাণ্য বই কিনেছিলাম। কেন কিনেছিলাম? না কেনার অস্বস্তি থেকে বাঁচার জন্য।) কিন্তু দেখলাম আমার ভেতরের আমি’র সবচাইতে ভালবাসার সাবজেক্ট হল লিটারেচার। যেকোনো টপিক নিয়ে ননস্টপ কঠিন কঠিন শব্দ আর ভাষার গাঁথুনি দিয়ে লিখতে পারতাম। কঠিন শব্দে বেশি মার্কস আসে, এটাই ছিল সময়ের অলিখিত নিয়ম। সেসময় রাত ১টার আগ পর্যন্ত ‘অকাজের পড়া’ পড়তাম আর এরপর শুরু করতাম ‘কাজের পড়া’। কখনও রেজাল্ট খারাপ হয়নি বলে বাসায় এটা নিয়ে বকত না। মায়ের কাছ থেকে বইকেনার জন্য টাকা চেয়েছি, কিন্তু পাইনি, এরকমটা কখনওই হয়নি।
সেই বোকা আমি এই স্বপ্নে বিভোর ছিলাম যে ইন্টারের পর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করতে যাব। বেছে বেছে দিল্লি কেন? কারণ সেখানে গেলে এস সেন আর রামজি লালের সাথে দেখা হবে, উনারা তো ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ান, উনাদের ক্লাস করতে পারব। খুব ছেলেমানুষি ভাবনা, না? এক নির্বোধ কিশোরের একেবারে একরৈখিক ভাবনা। নির্বোধ কেন? যে ছেলে ইন্টারে সায়েন্সে পড়ে অনার্সে সাহিত্যে পড়াশোনা করার স্বপ্ন দেখার ‘অপরাধ’ করে, সে নির্বোধ নয় তো কী? টেস্ট পরীক্ষার পর মারাত্মক টাইফয়েডে আক্রান্ত হলাম। খুব অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কারণে টেস্টের পরের ৩-৪ মাস ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারলাম না, অনেক পড়াই ভুলে গেলাম। সবাই বুদ্ধি দিল, “এবার পরীক্ষা দিলে তুমি স্ট্যান্ড করতে পারবে না, পরেরবার পরীক্ষা দাও।” আমাদের সময়ে ‘বোর্ডস্ট্যান্ড’ বলে একটা দারুণ স্বপ্নের ব্যাপার ছিল, কোন একটা শিক্ষাবোর্ডে প্রত্যেক গ্রুপের মেধাতালিকার প্রথম ২০ জনকে ‘স্ট্যান্ড করেছে’ ধরা হত। শুধু আমার মা বলেছিল, “পরীক্ষা দিয়ে দে। তুই যেভাবে পারিস, লিখে দিয়ে আসিস। রেজাল্ট যা হয়, হোক।”
কখনও কখনও এমনকি পুরো পৃথিবীর বাইরে গিয়ে মায়ের কথা শুনলে সেটার শেষটা ভাল হয়। পরীক্ষা দিয়ে দিলাম। স্টার মার্কস পেয়েছিলাম। স্টার মার্কস মানে, ইন টোটাল কমপক্ষে ৭৫০ পেতে হবে। আমাদের সময়ে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে স্টার মার্কস পেয়েছিলাম আমরা ৭০-৮০ জন। (এটা বললাম এই জন্য যে, এখন চট্টগ্রাম কলেজ থেকে কতজন গোল্ডেন এপ্লাস পায়, সেটার সাথে তুলনা করলে স্টার মার্কস পাওয়াটাও কতটা কঠিন ছিল, সেটা বুঝতে সহজ হবে।) সে সময়ে একটা মজার ব্যাপার ঘটেছিল। পরীক্ষার আগে অসুস্থ থাকার কারণে দীর্ঘদিন পড়াশোনা ঠিকমতো করতে পারিনি, রিভিশন দেয়া সম্ভব হয়নি, তাই আগে যা পড়েছিলাম, তার বেশিরভাগই মাথা থেকে ছুটে গিয়েছিল। ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি-ম্যাথসে খুব কম মার্কস পেলাম, গড়ে ৭২.৬০। কিন্তু ইংরেজিতে পেলাম বোর্ড হাইয়েস্ট (১৪০), আর বাংলায় থার্ড বোর্ড হাইয়েস্ট (১৫৬)। এর মানে কী দাঁড়াল? এর মানে হল, পরীক্ষার খাতায় ল্যাংগুয়েজ আর লিটারেচারে আমি বানিয়ে বানিয়ে যা লিখে দিয়ে এসেছিলাম, সেটাই ‘সেরা’ ছিল। তুমি যা ভালভাবে পার, যদি সেটাকে ভালবাস, তবেই সেটাই তোমাকে সেরা করে দেবে।
আমার মামারা ইন্ডিয়াতে থাকেন। সেসময় চিঠি লেখার চল ছিল, বড় সুন্দর সুন্দর কথায় সবাই চিঠি লিখত। একেকটা চিঠি একেকটা হৃদয়। তাঁদেরকে চিঠিতে জিজ্ঞেস করলাম, দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশে পড়তে হলে কী করতে হয়, কত খরচ পড়ে, এরকম আরও কিছু বিষয়। মামারা ধরেই নিলেন, আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমার মা-বাবা’কে ফোন করে বললেন, “কীরে, বাপ্পি নাকি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে না?” ইঞ্জিনিয়ার হতে না-চাওয়াটাও যে একটা অপরাধ, সেটা ওই বোকাসোকা কিশোর কীভাবে জানবে? সেই অপরাধী কিশোরটি বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারল না। সেবার বুয়েটের জন্য সায়েন্সের সাবজেক্টগুলিতে মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট ছিল গড়ে ৭২.৬৬ আর ওর ছিল ৭২.৬০। এখন তোমরাই বল, ০.০৬ মার্কস একটা ছেলের মেধাকে কতটুকু ডিফাইন করতে পারে? কিন্তু ভুল হোক, ঠিক হোক, এটাই সিস্টেম। আমার বুয়েটে পরীক্ষা দেয়ার কিংবা ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা ছিল না মানে এই নয় যে, আমার বুয়েটে পড়ার যোগ্যতা ছিল না। তুমি তোমার কিংবা তোমার বাবা-মা’র পছন্দের জায়গায় পড়ার সুযোগ নাও পেতে পার, কিন্তু তার মানে, এই নয় যে, সে সময় থেকে ১০ বছর পরে তুমি ওসব জায়গা থেকে পাসকরা বন্ধুদের তুলনায় পিছিয়ে থাকবেই। চুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় ২য় হলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২০তম, লেদারে ৭তম (শেষের দুটোতেই কোনরকমের বিন্দুমাত্রও প্রস্তুতি ছিল না), বুয়েটে তো পরীক্ষাই দিতে পারিনি, আর কোথাও থেকে ফর্ম নিইনি। আমাদের ফ্যামিলিতে কোন ডাক্তার নেই বলে ইন্টারে বায়োলজি নিলে বাবা-মা জোর করে হলেও ডাক্তার বানিয়েই ছাড়বে, এই ভয়ে বাবা-মা’কে ‘স্ট্যাট নিলে স্ট্যান্ড করতে সুবিধা হবে’ টাইপের উল্টাপাল্টা বুঝিয়েটুঝিয়ে ইন্টারে স্ট্যাট নিয়েছিলাম।
বাবা-মা’কে অনেক কান্নাকাটি করে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, আমাকে অন্তত ঢাকা ভার্সিটিতে ইংলিশে পড়তে দিক। দিল না! রাগ করে আমিও চুয়েটে পড়াশোনা করলাম না। সবসময়ই লিটারেচার, ল্যাংগুয়েজ, জিআরই, জিম্যাট নিয়ে পড়ে থাকতাম; টিউশনি করতাম, ব্যবসা করতাম। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লাম, সার্টিফিকেটও পেলাম, কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার হলাম না। এখন তুমিই বল, সেরা জায়গায় পড়লেই যে ফিল্ডে পড়াশোনা করছ, সেই ফিল্ডেই সেরা কিছু হয়ে যাবে, এরকমটা কি হবেই হবে? নিজেকে জিজ্ঞেস করে দেখ, তুমি আসলে কী করতে ভালবাস? কী করলে তোমার মধ্যে অতটা ক্লান্তি কাজ করে না? কী নিয়ে ভাবলে আরও ভাবতে ইচ্ছে করে? ননস্টপ কী নিয়ে কাজ করলেও থামতে ইচ্ছে করে না? পৃথিবীর অন্য ১০ জনের মতই তুমিও ইউনিক, তোমার ভাবনাগুলি তোমার মতই, সবাই যা পারে, তোমাকেও তা-ই পারতে হবে, এমন কিছুতেই নয়। গাছে চড়ার পরীক্ষায় বেচারা হাতিটা গাছে চড়তে পারল না বলে গুড ফর নাথিং হয়ে গেল? তুমি নিজের ইন্টিউশনকে জিজ্ঞেস করে দেখ, তুমি এমন কী পার, যা অন্যরা পারে না এবং তোমাকে আলাদা করে চেনাবে। খুব করে সেটার যত্ন নাও। এই যেমন, আমি লিখতে পারতাম, অকাজের পড়া পড়তে পারতাম, বাংলা আর ইংরেজি আমার যেকোনো বন্ধুর চাইতে বেশি পারতাম। আমি শুরুতেই বুঝে গিয়েছিলাম, আমার ভেতর থেকে কে যেন বারবারই বলে দিচ্ছিল, আমি ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য জন্মাইনি। ওটা আমার জন্য না। সি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের বালাগুরুস্বামীর বইয়ের printf “Hello World!” ছাড়া আর কোন প্রোগ্রামিং কখনও নিজের বুদ্ধিতে করেছি বলে মনে পড়ে না। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছ, আমি কপি-পেস্ট করে পাসকরা অ্যাক্সিডেন্টাল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।
তুমি যেখানে যে বিষয় নিয়েই পড় না কেন, সবসময়ই এটা মনে রাখবে, ভার্সিটি হল তোমার জন্য একটা গ্রুমিং গ্রাউন্ড। মেডিক্যাল থেকে পাস করে তোমাকে ডাক্তার হতেই হবে কেন? যদি তুমি ডাক্তারি ভাল না বাস, তবে তুমি দেশকে সবচাইতে ভালভাবে সেবা করতে পারবে সেবা না করার মাধ্যমে। আমি যদি চুয়েট থেকে পাস করার পর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারই হতাম, তবে আমার দিকে আঙুল তুলে সবাই বলাবলি করতো, “দেখ দেখ! চুয়েটের প্রোডাক্ট কী বাজে!!” আমি আমার অপমান সহ্য করতে পারি, কিন্তু আমার মায়ের অপমান কীভাবে সহ্য করব? আমি সেটা হতে দিইনি। হয়তোবা তোমার ফটোগ্রাফি পছন্দ। আমি তোমাকে বলব, Go for it! নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে দাও ওটার পেছনে। দুএকটা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড জিতে দেখিয়ে দাও, Photography is the right girlfriend for you to live the whole life with! সবাই সবকিছু পারে না। তোমার মতো একটা ফটো তুলতে দিলে হয়তো আমি ক্যামেরাই ভেঙে ফেলব, তার মানে কিন্তু এই নয় যে, I’m good for nothing. It’s just that photography is not my cup of tea.
জীবনে কিছু একটা করতে হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করতে হবে, এটা কোথায় বলা আছে? আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার যখন প্রথমবার জিমে গিয়েছিলেন, তখন খুব রোগাপটকা শুকনা ছিলেন। উনি যখন জিমের ইনস্ট্রাক্টরকে বলেছিলেন, আমি আগামী ৫ বছরের মধ্যেই মিস্টার ওয়ার্ল্ড হতে চাই, তখন ইনস্ট্রাক্টর সহ সেখানকার সবাই হোহো শব্দে হেসে উঠেছিলেন। উনি তখনই সে জিম থেকে বেরিয়ে আসেন এবং ২য় বার আর কোনদিনও সেখানে যাননি। এরপরেরটা ইতিহাস। একটা সিম্পল রুল শিখিয়ে দিই : যারা তোমাকে বলে, তুমি কিছু করতে পারবে না, তাদের হয় মিশো না, কিংবা তাদের কথা শুনো না; এমনকি তাঁরা তোমার বাবা-মা হলেও! মহাবিশ্ব এক বিচিত্র জায়গা! এখানে Talent আর Achievement এই দুটো বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুব একটা ভাল না। যাদেরকে দেখলে মনে হয়, ভাল করবে, অনেকসময়ই শেষ পর্যন্ত তারা ভাল করে না। তাই আমি তোমাদেরকে বলব, তোমার নিজের সম্পর্কে কিংবা তোমার যে বন্ধুটি ভাল একটা জায়গায় চান্স পেয়ে গেছে, ওর সম্পর্কে কিছুই বলার সময় এখনও আসেনি। যেহেতু তুমি ‘কোথাও’ চান্স পাওনি, ‘মহা অপরাধ’ করে ফেলেছ, সেহেতু এ সময়ে পুরো দুনিয়াটাই তোমাকে কথা শোনানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। ‘কোথাও’ মানে কী? কোথাও মানে, এমন একটা ভার্সিটি, যে ভার্সিটির ‘নাম বেচে’ একটা ভাল চাকরি পাওয়া যায়। আরে ভাই, তোমার ভার্সিটির নাম বেচে তোমাকে চলতে হবে কেন? তুমি তোমার নিজের নামেই চলবে। এর জন্য যা যা করা দরকার, প্রয়োজনে নিজের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও সেগুলির সবকিছুই করবে। কী? পারবে তো? ইন্টারে না হয় ছোট ছিলে, কিন্তু এখন আর তুমি ছোট নও। তোমার কাজ হল, যে কথাগুলি শুনছ, সে কথাগুলিকে নীরবে হজম করে নিজের মধ্যে প্রচণ্ড জেদ তৈরি করা, আর প্রতিটি মুহূর্তেই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকা। তোমার আশেপাশের কাউকেই তোমার ক্ষমতাকে ডিফাইন করে দিতে দিয়ো না। তোমার ভার্সিটি তোমাকে আসলেই কিছু শেখাতে পারবে না, যদি তুমি নিজে না শেখ। ভার্সিটিটিকে আমার কখনওই Learning factory মনে হয়নি, বরং সবসময়ই Degree factory মনে হয়েছে। অনার্সে পড়ে তুমি যেটা শিখতে পার, সেটা হল, তোমার Proper attitude. পৃথিবীর ইতিহাস উল্টে দেখ, এখানে যাঁদেরকে আমরা সবাই Great বলে জানি, তাঁদের মাত্র ১৫% মানুষ প্রথম জীবনে তথাকথিত ‘মেধাবী’ ছিলেন। বাকি ৮৫%ই তোমার-আমার মতো অমেধাবীদের দলে।
শোনো! আমি চুয়েট থেকে যে সিজিপিএ নিয়ে পাস করেছি, সেটা পাওয়া কিন্তু সহজ নয়। কারণ সেটা পেতে ‘চাইলে’ তোমাকে অনেক চেষ্টা করে পড়াশোনা না করে বসে থাকতে হবে। আমার কী দোষ! I was kept in a place for praying which was not my temple. That’s why, I couldn’t pray. Simple! আমি অনেকগুলি F পেয়েছি। এর মানে, এই নয় যে, আমি অনেকবার ফেল করেছিলাম। I never regretted as I was not born to be a good computer engineer with good academic grades. আমি ২.৭৪ নিয়ে চুয়েট থেকে গ্রাজুয়েশন করেছি। And, I firmly believed, 2.74 was just a number, not what I was, let alone, my life. কথা হল, তুমি কখন মন খারাপ করবে? কখন ধরে নেবে, কিচ্ছু হচ্ছে না কিচ্ছু হচ্ছে না? তখনই, যখন তুমি যা করতে ভালবাস, তা ঠিকভাবে করতে পারছ না। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমার ভাললাগার কাজটি ঠিকভাবে করে যেতে পারছ, ততক্ষণ পর্যন্ত, তুমি হেরে গেছ—এটা বলার সময় হয়নি। তবে এটা একটু জেনে নিয়ো, যা তোমার করতে ভাল লাগে, তা আসলে কতটুকু কাজের। আমি আবারও বলছি, ভার্সিটি তোমাকে জাস্ট একটা সার্টিফিকেট দেবে, আর কিছুই না! তুমি কী হতে পারবে, কী হতে পারবে না, সেটা তোমার ভার্সিটি বলে দেবে না। তুমি কোথায় পড়ছ, সেটা বড় কথা নয়; তুমি সামনে কোথায় যাচ্ছ, সেখানে যাওয়ার জন্য এখন থেকে তুমি কী করছ, কী করছ না, সেটাই বড় কথা।
আমি এসএসসি পাস করেছিলাম চট্টগ্রামের সবচাইতে বাজে স্কুলগুলির একটি থেকে : চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল। বাজে, এই অর্থে, সেখানে ভাল স্টুডেন্টরা পড়ত না, যারা কোথাও চান্স পেত না, ওরাই পড়ত, স্কুলটার রেজাল্ট অতো ভাল হত না। বাজে স্কুলে পড়েছিলাম বলেই যে বাজে স্কুলের বাজে স্টুডেন্টদের সাথে মিশে ওদের মতই বাজেভাবে পড়াশোনা করে একটা বাজে রেজাল্ট করে বাজে একটা আগামীর দিকে বাজেভাবে যেতে হবে, এমন তো কোন ‘বাজে কথা’ নেই। বরং আমি এটা বলতে গর্ব করি যে, আরও কিছু অ্যালামনাইয়ের মতো আমার জন্যও চট্টগ্রামের সবচাইতে বাজে স্কুলটাকে নিয়ে মন্তব্য করার আগে লোকজনকে অন্তত ১০০বার ভেবে নিতে হয়। তোমাদের বলছি, ভার্সিটি স্টুডেন্টদেরকে বড় করে না, স্টুডেন্টরাই ভার্সিটিকে বড় করে। একটা অ্যাডমিশন টেস্ট হল জাস্ট একটা টিটোয়েন্টি ম্যাচ। ওরকম একটা ম্যাচে যেকোনো কারণেই হোক, একজন টেন্ডুলকার শূন্য রানেই আউট হয়ে যেতেই পারে। কিন্তু এটা দিয়ে তো আর একজন টেন্ডুলকারকে জাজ করা যায় না। হয়তো সেদিনটা ওর ছিল না। আবার এমনও হতে পারে, একজন ৯ নম্বরে নামা ব্যাটসম্যানও মরিয়া হয়ে ব্যাট চালিয়েও ঠিকঠাক বলে লাগিয়ে লাগিয়ে সেঞ্চুরি করে ফেলতে পারে! তাই বলে আর তো সে টেন্ডুলকার হয়ে যায় না।
একজন সৌম্য সরকার হয়তোবা টেন্ডুলকার হবে না, কিন্তু পরবর্তীতে যেন কেউ কেউ সৌম্য সরকার হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে চেষ্টা তো সৌম্য সরকারকে করে যেতে হবে, তাই না? আবার এমনও তো হতে পারে, এভাবে চেষ্টা করতে করতে, ক্রমাগত নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে যেতে একদিন আমাদের সৌম্য ওদের টেন্ডুলকারকেও ছাড়িয়ে যাবে। কে বলতে পারে?!
গুড লাক!!
(সুশান্ত পালের ফেসবুক থেকে নেয়া)

Tuesday, November 10, 2015

৪ মাসেই হয়ে জান বিসিএস ক্যাডার

বিষয় ভিত্তিক পরামর্শ
৩৫তম বিসিএস এর বিজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রশ্ন করা হবে ১০টি টপিক এর ওপর। দেখতে বড় টপিক হলেও বাস্তবে এটি তেমন বড় কোনো সিলেবাস নয়। কারণ এই টপিকগুলো আগেও ছিল। শুধু মান বণ্টনটা এই বার বৃদ্ধি করেছে আর নতুন করে দুটি টপিক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
বাছাই পরীক্ষায় নতুন প্রশ্নের মান বণ্টন:
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য- ৩৫
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য- ৩৫
বাংলাদেশ বিষয়াবলি- ৩০
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি- ২০
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা- ১০
সাধারণ বিজ্ঞান-১৫
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি- ১৫
গাণিতিক যুক্তি- ১৫
মানসিক দক্ষতা- ১৫
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন- ১০
মোট=২০০ নম্বর ।
bcsকিভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন?
> আবার বলছি, প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য সহজ চিন্তা করুন, প্রস্তুতিও তত সহজ হবে।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য যত বেশী জটিল চিন্তা করবেন , প্রস্তুতি নেওয়াও তত কঠিন হবে।
পরিকল্পনা করে পড়ুন, নিজস্ব সাজেশন করুন প্রিলিমিনারি পাস নিশ্চিত।
আপনাকে পাস করার জন্য ১২০ থেকে ১৩০ নম্বর পেতে হবে। অনেকেই মনে করছেন এত কম নম্বর? এই নম্বর তো সবাই পাবে! না ১২০ থেকে ১৩০ কোনো সহজ নম্বর নয়। এই রেঞ্জের মার্ক ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার জন পাবে। অর্থাৎ অনেকেই ১৩০ পর্যন্ত নম্বর পাবে কিন্তু তারা নেগেটিভ নম্বরের কারণে ১০০ মার্কের নিচে চলে যাবে।
> হাতে আর বেশি সময় নেই। তাই প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আপনাকে পরিকল্পনা করে পড়তে হবে এবং সব থেকে কম সময়ে বেশি বিষয় আত্মস্থ করতে হবে। আর যে বিষয়গুলো চেনা জানা সেই বিষয়গুলো আগে শেষ করতে হবে। আমার দৃষ্টিকোন থেকে কোন কোন বিষয় আগে প্রস্তুতি নিবেন তা নিন্মে সিরিয়াল অনুযায়ী উল্লেখ করলাম।
১) সাধারণ বিজ্ঞান-১৫
২) কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি- ১৫
৩) বাংলাদেশ বিষয়াবলি- ৩০
৪) আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি- ২০
৫) গণিতিক যুক্তি- ১৫, মানসিক দক্ষতা- ১৫
৬) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য- ৩৫
৭) ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য- ৩৫
৮) ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা- ১০
৯) নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন- ১০
সাধারণ বিজ্ঞান: আমার মতে আপনি বিজ্ঞান বিষয় প্রথমে পড়া শুরু করবেন। এই বিষয় থেকে আপনি ১৫ মার্ক কমন পাবেন। আর এই বিষয়ের প্রশ্ন হুবহু কমন আসে। বিজ্ঞান বিষয় পড়ার জন্য বোকার মতো সব শ্রেণির বই মুখস্ত করার দরকার নেই, যেখানে রেডিমেট প্রশ্ন ও উত্তর পাওয়া যায় সেখানে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না।
বিজ্ঞান বইয়ের জন্য দেখুন: ওরাকল প্রিলিমিনারি বিজ্ঞান বা MP3 বিজ্ঞান। বিগত বছরের পরীক্ষায় এসেছে সেসব প্রশ্ন অনুশীলন করুন।
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি: কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি এই বিষয়ের নামটা দেখে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এই বিষয়টা অত্যন্ত সহজ ও মজার। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির ওপর যেসব প্রশ্ন এসেছে শুধু সেসব প্রশ্নই পড়বেন, এর বাইরে পড়ার প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি: বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এতে ৪৫ মার্ক পর্যন্ত কমন পাওয়া সম্ভব। এ জন্য আপনাকে একটু পরিকল্পনা করে পড়তে হবে। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর জন্য ‘আজকের বিশ্ব’ বা  ‘নতুন বিশ্ব’ এই জাতীয় বই না পড়ে বরং জব সল্যুশন থেকে সব নোট করে পড়তে পারেন। কারণ আজকের বিশ্ব বা নতুন বিশ্ব এই সব বইয়ের মধ্যে যত তথ্য আছে তা আপনি মুখস্ত করে ধরে রাখতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যারা জব সল্যুশন থেকে নোট করে পড়েছেন তাঁরা সবচেয়ে বেশী সঠিক উত্তর দিয়েছেন। কারণ আপনি যখন জব সল্যুশন পড়বেন তখন আপনি নিজেই আবিষ্কার করে ফেলবেন কিভাবে প্রশ্ন করে আর কোন ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় বারবার আসে।
আপনি জব সল্যুশন যখন পড়বেন তখন নোট করুন আর উত্তরটা খাতার একদম ডান পাসে লিখে স্কেল দিয়ে ঢাকনা দিয়ে রিভিশন দিন।
জব সল্যুশন থেকে কীভাবে নোট করবেন?
জব সলুশন পড়ার সময় বিষয় অনুযায়ী নোট করুন। যেমন যখন বিজ্ঞান পড়বেন তখন প্রথম থেকেই জব সল্যুশন এর শুধু বিজ্ঞানের প্রত্যেকটা প্রশ্ন উত্তর এক লাইনে লিখবেন। আবার যখন ওই প্রশ্নটা রিপিট পাবেন তা আর লিখতে হবে না। এভাবে পুরো বিজ্ঞানটা একটা খাতায় ক্রমিক নং অনুযায়ী ১,২,৩,৪…… করে নোট করে নিন। এরপর জব সলুশন না খুলে শুধু ওই খাতাটা পড়বেন। এতে করে বারবার জব সলুশন এর পৃষ্ঠা উল্টানো লাগবে না। আর খুব সহজেই কয়েক দিনের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবেন। এভাবে সব বিষয় নোট করবেন, এতে করে আপনি নিজেই নিজের জন্য প্রিলিমিনারি ডাইজেস্ট তৈরি করে নিতে পারেন। সাধারণ জ্ঞান এর জন্য দেখুন: জব সলুশন, ১০ম থেকে ৩৪ বিসিএস এর প্রশ্ন এবং কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স।
(পুনশ্চ: জব সল্যুশন থেকে পড়তে হবে ১৯৯৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সকল ক্যাডার ও নন ক্যাডার প্রশ্ন। অর্থাৎ শুধু বিসিএস নয়, সকল পরীক্ষার প্রশ্ন দেখতে হবে।)
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা: এই বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আপনি গণিত বই চ্যাপ্টার অনুযায়ী সমাধান করবেন। তাহলে আপনি গণিতের প্রশ্নের ধরণটা খুব সহজেই আবিষ্কার করতে পারবেন, বুঝতে পারবেন গণিত প্রশ্ন কীভাবে হয়। গণিতে ভালো করার জন্য ক্যালকুলেটরের ব্যাবহার ভালো করে অনুশীলন করে রাখুন। ১০ ডিজিটের সাধারণ ক্যালকুলেটর। কারণ অনেকেই Scientific ক্যালকুলেটর ব্যাবহার করতে করতে সাধারণ ক্যালকুলেটরে ভুল করেন। গাণিতিক যুক্তি বিষয়ের জন্য দেখুন অ্যাসিওরেন্স এর গণিত ও মানসিক দক্ষতা। আরেকটি বই কিনতে পারেন শর্টকাট ফরমুলা শেখার জন্য। তা হলো এক্সক্লুসিভ ম্যাথ, মধুমতি প্রকাশনীর।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য: এই বিষয়ের জন্য একটু কষ্ট করতে হবে, কারণ এই বিষয়ে ভুল করার বা ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বেশী। এই দুই মাসে ভালো প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সহজ পন্থা হচ্ছে জব সল্যুশন থেকে নোট করে পড়তে হবে ১৯৯৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সকল ক্যাডার ও নন ক্যাডার প্রশ্ন। অর্থাৎ শুধু বিসিএস নয় সকল পরীক্ষার প্রশ্ন দেখতে হবে। সাথে MP3 বাংলা থেকে সব কিছু পড়তে হবে ।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য অনেকেই বাংলার উপন্যাস, কবিতা, ইত্যাদি জন্য সৌমিত্র শেখরের সাহিত্য জিজ্ঞাসা পড়েন এটি আমি সমর্থন করি না। কারণ এক সময় সৌমিত্র শেখরের সাহিত্য জিজ্ঞাসা আমি পুরো মুখস্ত করেছিলাম এতে করে পরীক্ষার সময় মাথা কাজ করে না কারণ মাথায় তখন অনেক উত্তর ঘুর ঘুর করে, যেমন উত্তর কি এইটা না ওইটা!
সৌমিত্র শেখরের সাহিত্য জিজ্ঞাসা হচ্ছে একধরনের ডিকশনারী। এতে প্রত্যেক লেখকের প্রায় সব সাহিত্যকর্মের নাম ও সাল দেওয়া আছে। যা আপনার গবেষণা বা লেখালেখিতে সহায়তা করবে, কিন্তু প্রিলিমিনারি পরীক্ষা কারো পাণ্ডিত্য দেখানোর জায়গা নয়। আপনার দরকার প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস, আর পাস করার জন্য দরকার সবচেয়ে বেশী প্রশ্ন কমন পাওয়া ও সঠিক উত্তর দেওয়া। আর আপনি প্রশ্ন কমন পেলেন কিন্তু বিভ্রান্ত হয়ে ভুল উত্তর দিলেন বা দিতে পারলেন না তা হলে সৌমিত্র শেখরের সাহিত্য জিজ্ঞাসা পড়ে কি লাভ?
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য: ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ের জন্য একমাত্র পরামর্শ হচ্ছে English for competitive exam।এই বই থেকে প্রায় সব কমন পাবেন। বিশেষ করে রিয়েল প্রশ্ন একটিও বাদ দিবেন না।
বাকি থাকল ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন। এখানে মোট মার্ক হচ্ছে ২০। এই বিষয় দুইটা যেহেতু নতুন সেহেতু এগুলো আপনার কমন সেন্সের ওপর ছেড়ে দিন। আর এই ২০ মার্ক এ কি আসবে বা কি আসবে না তা নিয়ে চিন্তা না করে বাকি ১৮০ মার্ক নিয়ে চিন্তা করুন। বোকার মত ২০ মার্কের জন্য ২ মাস অনিশ্চিত পড়ালেখা করার কোনো মানে হয় না।
সবার প্রস্তুতি সফল হোক।

লেখক: সহকারী কর কমিশনার
(৩৩তম বিসিএস)।

Monday, November 2, 2015

ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি

প্রথমবার যখন ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছিলাম, কিছুই পারিনি। যতটুকু মনে পড়ে মাত্র ৪০-৪২ তি প্রশ্নের উত্তর জানা ছিল আমার। আর বুজতেই পারছেন মাত্র ৪০ মার্ক দিয়ে ব্যাংক নিয়োগ পরিক্ষায় টিকা সম্ভব নয়। আর এখন মোটামুটি এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে গেছি যে না পড়লে ও মিনিমাম ৬৫ + উত্তর দিতে পাড়ি। কয়েকটি পরীক্ষায় টিকে গেছি। তাই ভাবলাম অভিজ্ঞতা টি একটু শেয়ার করি। 

বাংলাদেশের নিয়োগ পরিক্ষার প্রশ্ন গুলো নতুন করে শুরু করলে কঠিন মনে হয়। আসলে তেমন কিছু নয়। গৎবাঁধা কিছু প্রশ্ন বারবার আসে। তাই সিস্টেম টি যেনে গেলে আপনার জন্যে সব সহজ হয়ে যায়। বেশীরভাগ নিয়োগ পরিক্ষাতে নিয়োগ কর্তারা গৎবাঁধা প্রশ্নের বাইরে কোন প্রশ্নই করে না। তাই ত সুযোগ। 
বর্তমানে ব্যাংক জবের চাহিদা ব্যাপক। তাই এটি দিয়েই শুরু করতে চাচ্ছি। ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষা দুটি ধাপে হয়। 

১. লিখিত ২. ভাইবা লিখিতঃ মূলত লিখিত পরিক্ষার উপরেই সব নির্ভর করে। লিখিত পরীক্ষার নাম্বার এর ভিত্তিতে নিয়োগ হয়ে যায়। তাই এই অংশের গুরুত্ব সর্বাধিক। লিখিত পরীক্ষায় বেশি নাম্বার পাওয়া মানে আপনার চাকরি নিশ্চিত। হ্যা, যা বলতাম, লিখিত পরীক্ষার আবার দুটি ধাপ থাকে। ক. এম. সি. কিউ খ. লেখালেখি ( আমার মতে) 
ক. এম. সি. কিউঃ এই অংশটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । এম. সি. কিউ মোট ১০০ টি প্রশ্ন থাকে । এই অংশে আপনি মিনিমাম ৬০ মার্ক না পেলে আপনার খাতা দেখা হবে না। অনেকে দেখা যায় লেখালেখি অংশে খুব ভাল করে কিন্তু টিকে না। কারন একটাই । এম. সি. কিউ অংশে মিনিমাম ৬০ না পেলে খাতাই দেখা হয় না। যারা ৬০ এর নিছে পায় তাদের খাতা প্রথম বারেই বাতিল। তাই এই অংশের প্রতি খুবই গুরুত্ব দিতে হবে। লেখালেখিতে তেমন ভাল না করেও শুধু এই অংশে ভাল করে অনেকে টিকে যায়। বিশেষ করে সরকারি ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে। এই অংশের প্রশ্ন হয় বাংলা, ইংরেজি , গনিত ও সাধারন জ্ঞান। 
বাংলা প্রশ্নের বেশির ভাগ ই আসে সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বানান, কারক, সমাস ও এক কথায় প্রকাশ। সিলেবাস ব্যাপক কিন্তু আপনি শুধু সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বানান, কারক, সমাস ও এক কথায় প্রকাশ পড়লেই আশা করা যায় ৯৫ % বাংলা উত্তর দিতে পারবেন। ইংরেজি প্রশ্নের বেশির ভাগ আসে সিননিম , এন্তনিম, এনালজি, প্রি- পজিসান, ভয়েস চেঞ্জ এবং তেন্স। এই যথেষ্ট। আশা করা যায় এই গুলোর উপর প্রস্তুতি নিলে আপনি ৯৫+ % উত্তর দিতে পারবেন। 
গনিত অংশটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে সুদ ও শতকরার অংক করলে ৫০ % কমন পাবেন। তবে পাটিগণিতের অন্য অংক গুলো অষ্টম শ্রেণির ইংলিশ ভারসান শেষ করলে আশা করি প্রস্তুতি পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। 
গৎবাঁধা সাধারন জ্ঞান। আগের কয়েক বছরের প্রশ্ন সল্ভ করলেই চলবে। আর হ্যা, এখন প্রায় সকল ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় কম্পিউটার থেকে প্রশ্ন করে। কম্পিউটার সংক্রান্ত ১৫০ টি এম. সি. কিউ পড়ে নিলে আশা করি উত্তর দিতে পারবেন। 
উপরের সাজেসান গুলো শুধুমাত্র আমার মত অলসদের জন্যে। বেশি ভাল করার জন্যে বেশি পড়ার বিকল্প নেই। হাত ব্যাথা হয়ে গেছে। তাছাড়া ভাইভার জন্যে পড়তে হবে। বাকিটুকু নিয়ে অন্য কোন দিন প্যাকপ্যাক করব। 
আগে শুধু এম. সি. কিউ অংশ নিয়ে প্যাকপ্যাক করেছিলাম। কিন্তু কোন ব্যাংকে কোন ধরনের এম. সি. কিউ পরিক্ষা নেয় তা বলা হয় নি। আমি প্রথমে সরকারি ৪ টি ব্যাংক এর এম. সি. কিউ নিয়ে বলতে চাই।সরকারি ৪ ব্যাংক হল১. সোনালি২. জনতা৩. অগ্রণী৪. রূপালি
সোনালি ব্যাংকঃ সোনালি ব্যাঙ্কের শেষ পরীক্ষায় শুধু লিখিত হয়েছে কোন এম. সি. কিউ দেয়া হয় নি। কিন্তু তার আগের পরিক্ষা গুলোতে এম. সি. কিউ ছিল ১০০ মার্ক, সময় ৬০ মিনিট। প্রশ্নের ধরন আগে যেমন বলেছিলাম। তবে সাহিত্য থেকে ১০ টি প্রশ্ন এসেছে। সাহিত্যের প্রশ্ন গুলো সহজ ছিল, গতানুগতিক। মার্ক বণ্টন হল ইংরেজি-৩০, বাংলা-২০, গনিত-১৫,সাধারন জ্ঞান- ২০, কম্পিউতার-১৫।
জনতা ব্যাংকঃজনতা ব্যাংকে নেগেটিভ মারকিং ০.২৫ , তাই আন্দাজে না লাগানোই ভাল। এম. সি. কিউ ছিল ১০০ মার্ক, সময় ৬০ মিনিট। মার্ক বণ্টন হল ইংরেজি-২৫, বাংলা-২৫, গনিত-২৫,সাধারন জ্ঞান- ২০, কম্পিউতার-৫।প্রশ্নের ধরন আগের মত, ইংরেজি সব স্পেলিং,সিননিম , এন্তনিম, এনালজি, প্রি- পজিসান, এর বাইরে আর কিছুই দেয় নি। আর অংক গুলো অষ্টম শ্রেণির ইংলিশ ভারসান। 

অগ্রণী ব্যাংকঃনেগেটিভ মারকিং নাই । আগে এম. সি. কিউ ছিল ৬৪ মার্ক, সময় ৫০ মিনিট। কিন্তু শেষ পরীক্ষায় ওরা শুধু এম. সি. কিউ পরীক্ষা নেয়। এম. সি. কিউ ছিল ৭৫ টি। নেগেটিভ মারকিং এবার থাকতে পারে। শেষ পরীক্ষার মার্ক বণ্টন হল ইংরেজি-২০, বাংলা-১০, গনিত-১৭, অর্থনীতি- ১৩, সাধারন জ্ঞান-৪, কম্পিউতার-১১।সামনের নিয়োগ পরীক্ষায় ওরা কিছু পরিবর্তন আনবে বলা হচ্ছে। সম্বভত এম. সি. কিউ ১০০ মার্ক করবে।
রূপালি ব্যাংকঃ নেগেটিভ মারকিং ০.২৫। প্রশ্নের ধরন খুবই মজাদার। এম. সি. কিউ ৬৪ মার্ক, সময় ৬০ মিনিট। মার্ক বণ্টন হল গনিত-১৫, ইংরেজি-১৫,সাধারন জ্ঞান- ১৫,বাংলা-১৫ , বর্ণনা মূলক গনিত ( পার্ট – ০১)-০৪। বর্ণনা মূলক গনিত ( পার্ট – ০১) এ একটি প্রশ্ন থাকে, প্রথমে অংক টি সল্ভ করতে হয়। পরে উত্তর অনুযায়ী এম. সি. কিউ দাগাতে হয়।আজ আর নয়।