ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি
প্রথমবার যখন ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছিলাম, কিছুই পারিনি। যতটুকু মনে পড়ে মাত্র ৪০-৪২ তি প্রশ্নের উত্তর জানা ছিল আমার। আর বুজতেই পারছেন মাত্র ৪০ মার্ক দিয়ে ব্যাংক নিয়োগ পরিক্ষায় টিকা সম্ভব নয়। আর এখন মোটামুটি এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে গেছি যে না পড়লে ও মিনিমাম ৬৫ + উত্তর দিতে পাড়ি। কয়েকটি পরীক্ষায় টিকে গেছি। তাই ভাবলাম অভিজ্ঞতা টি একটু শেয়ার করি।
বাংলাদেশের নিয়োগ পরিক্ষার প্রশ্ন গুলো নতুন করে শুরু করলে কঠিন মনে হয়। আসলে তেমন কিছু নয়। গৎবাঁধা কিছু প্রশ্ন বারবার আসে। তাই সিস্টেম টি যেনে গেলে আপনার জন্যে সব সহজ হয়ে যায়। বেশীরভাগ নিয়োগ পরিক্ষাতে নিয়োগ কর্তারা গৎবাঁধা প্রশ্নের বাইরে কোন প্রশ্নই করে না। তাই ত সুযোগ।
বর্তমানে ব্যাংক জবের চাহিদা ব্যাপক। তাই এটি দিয়েই শুরু করতে চাচ্ছি। ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষা দুটি ধাপে হয়।
১. লিখিত ২. ভাইবা লিখিতঃ মূলত লিখিত পরিক্ষার উপরেই সব নির্ভর করে। লিখিত পরীক্ষার নাম্বার এর ভিত্তিতে নিয়োগ হয়ে যায়। তাই এই অংশের গুরুত্ব সর্বাধিক। লিখিত পরীক্ষায় বেশি নাম্বার পাওয়া মানে আপনার চাকরি নিশ্চিত। হ্যা, যা বলতাম, লিখিত পরীক্ষার আবার দুটি ধাপ থাকে। ক. এম. সি. কিউ খ. লেখালেখি ( আমার মতে)
ক. এম. সি. কিউঃ এই অংশটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । এম. সি. কিউ মোট ১০০ টি প্রশ্ন থাকে । এই অংশে আপনি মিনিমাম ৬০ মার্ক না পেলে আপনার খাতা দেখা হবে না। অনেকে দেখা যায় লেখালেখি অংশে খুব ভাল করে কিন্তু টিকে না। কারন একটাই । এম. সি. কিউ অংশে মিনিমাম ৬০ না পেলে খাতাই দেখা হয় না। যারা ৬০ এর নিছে পায় তাদের খাতা প্রথম বারেই বাতিল। তাই এই অংশের প্রতি খুবই গুরুত্ব দিতে হবে। লেখালেখিতে তেমন ভাল না করেও শুধু এই অংশে ভাল করে অনেকে টিকে যায়। বিশেষ করে সরকারি ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে। এই অংশের প্রশ্ন হয় বাংলা, ইংরেজি , গনিত ও সাধারন জ্ঞান।
বাংলা প্রশ্নের বেশির ভাগ ই আসে সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বানান, কারক, সমাস ও এক কথায় প্রকাশ। সিলেবাস ব্যাপক কিন্তু আপনি শুধু সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বানান, কারক, সমাস ও এক কথায় প্রকাশ পড়লেই আশা করা যায় ৯৫ % বাংলা উত্তর দিতে পারবেন। ইংরেজি প্রশ্নের বেশির ভাগ আসে সিননিম , এন্তনিম, এনালজি, প্রি- পজিসান, ভয়েস চেঞ্জ এবং তেন্স। এই যথেষ্ট। আশা করা যায় এই গুলোর উপর প্রস্তুতি নিলে আপনি ৯৫+ % উত্তর দিতে পারবেন।
গনিত অংশটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে সুদ ও শতকরার অংক করলে ৫০ % কমন পাবেন। তবে পাটিগণিতের অন্য অংক গুলো অষ্টম শ্রেণির ইংলিশ ভারসান শেষ করলে আশা করি প্রস্তুতি পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।
গৎবাঁধা সাধারন জ্ঞান। আগের কয়েক বছরের প্রশ্ন সল্ভ করলেই চলবে। আর হ্যা, এখন প্রায় সকল ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় কম্পিউটার থেকে প্রশ্ন করে। কম্পিউটার সংক্রান্ত ১৫০ টি এম. সি. কিউ পড়ে নিলে আশা করি উত্তর দিতে পারবেন।
উপরের সাজেসান গুলো শুধুমাত্র আমার মত অলসদের জন্যে। বেশি ভাল করার জন্যে বেশি পড়ার বিকল্প নেই। হাত ব্যাথা হয়ে গেছে। তাছাড়া ভাইভার জন্যে পড়তে হবে। বাকিটুকু নিয়ে অন্য কোন দিন প্যাকপ্যাক করব।
আগে শুধু এম. সি. কিউ অংশ নিয়ে প্যাকপ্যাক করেছিলাম। কিন্তু কোন ব্যাংকে কোন ধরনের এম. সি. কিউ পরিক্ষা নেয় তা বলা হয় নি। আমি প্রথমে সরকারি ৪ টি ব্যাংক এর এম. সি. কিউ নিয়ে বলতে চাই।সরকারি ৪ ব্যাংক হল১. সোনালি২. জনতা৩. অগ্রণী৪. রূপালি
সোনালি ব্যাংকঃ সোনালি ব্যাঙ্কের শেষ পরীক্ষায় শুধু লিখিত হয়েছে কোন এম. সি. কিউ দেয়া হয় নি। কিন্তু তার আগের পরিক্ষা গুলোতে এম. সি. কিউ ছিল ১০০ মার্ক, সময় ৬০ মিনিট। প্রশ্নের ধরন আগে যেমন বলেছিলাম। তবে সাহিত্য থেকে ১০ টি প্রশ্ন এসেছে। সাহিত্যের প্রশ্ন গুলো সহজ ছিল, গতানুগতিক। মার্ক বণ্টন হল ইংরেজি-৩০, বাংলা-২০, গনিত-১৫,সাধারন জ্ঞান- ২০, কম্পিউতার-১৫।
জনতা ব্যাংকঃজনতা ব্যাংকে নেগেটিভ মারকিং ০.২৫ , তাই আন্দাজে না লাগানোই ভাল। এম. সি. কিউ ছিল ১০০ মার্ক, সময় ৬০ মিনিট। মার্ক বণ্টন হল ইংরেজি-২৫, বাংলা-২৫, গনিত-২৫,সাধারন জ্ঞান- ২০, কম্পিউতার-৫।প্রশ্নের ধরন আগের মত, ইংরেজি সব স্পেলিং,সিননিম , এন্তনিম, এনালজি, প্রি- পজিসান, এর বাইরে আর কিছুই দেয় নি। আর অংক গুলো অষ্টম শ্রেণির ইংলিশ ভারসান।
অগ্রণী ব্যাংকঃনেগেটিভ মারকিং নাই । আগে এম. সি. কিউ ছিল ৬৪ মার্ক, সময় ৫০ মিনিট। কিন্তু শেষ পরীক্ষায় ওরা শুধু এম. সি. কিউ পরীক্ষা নেয়। এম. সি. কিউ ছিল ৭৫ টি। নেগেটিভ মারকিং এবার থাকতে পারে। শেষ পরীক্ষার মার্ক বণ্টন হল ইংরেজি-২০, বাংলা-১০, গনিত-১৭, অর্থনীতি- ১৩, সাধারন জ্ঞান-৪, কম্পিউতার-১১।সামনের নিয়োগ পরীক্ষায় ওরা কিছু পরিবর্তন আনবে বলা হচ্ছে। সম্বভত এম. সি. কিউ ১০০ মার্ক করবে।
রূপালি ব্যাংকঃ নেগেটিভ মারকিং ০.২৫। প্রশ্নের ধরন খুবই মজাদার। এম. সি. কিউ ৬৪ মার্ক, সময় ৬০ মিনিট। মার্ক বণ্টন হল গনিত-১৫, ইংরেজি-১৫,সাধারন জ্ঞান- ১৫,বাংলা-১৫ , বর্ণনা মূলক গনিত ( পার্ট – ০১)-০৪। বর্ণনা মূলক গনিত ( পার্ট – ০১) এ একটি প্রশ্ন থাকে, প্রথমে অংক টি সল্ভ করতে হয়। পরে উত্তর অনুযায়ী এম. সি. কিউ দাগাতে হয়।আজ আর নয়।
No comments:
Post a Comment